একদিকে মানুষ ঘরমুখী অন্যদিকে চৈত্রের প্রখর দাবদাহে পুড়ছে মাঠে মাঠে কৃষকের স্বপ্ন। বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টিসহ নানা ধরনের দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের কৃষকরা। গত কয়েকদিন হলেই চলছে রৌদ্রের প্রখরতা।
বগুড়া সারিয়াকান্দির বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের নানা ধরনের ফসল পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য। যে সকল কৃষকদের শ্যালো মেশিন রয়েছে তারা মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে ফসলগুলোর জীবন কোনমতে বেঁচে রেখেছেন। যেসব জমিগুলোতে পানি দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই সেইসব জমির ফসলগুলো পুড়ে যাচ্ছে।
সারিয়াকান্দি সদরের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, আমার জমিগুলো যমুনা নদীর সাথে সংযুক্ত হওয়ায় জমিতে আগামভাবে পাট বপন করতে হয়। এ বছর আগামভাবে পাট বপন করার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন বৃষ্টির দেখা পাইনি। অনাবৃষ্টির কারণে আর রৌদ্রের প্রখর তাপে আমার প্রায় সবগুলো পাটই পুড়ে যাচ্ছে।
উপজেলার কাজলা বাওইটোনা চরের চাষী শহিদুল ইসলাম জানান, আমি এ বছর কয়েক বিঘা জমিতে চিনাবাদাম লাগিয়েছি। কয়েকদিনের প্রখর রোদে আমার বেশিরভাগ চিনাবাদামই পুড়ে গেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে জমিতে কৃষকরা পাটবীজ বপন করতে পারেননি। তবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে কিছু জমিতে পাটবীজ বপন করা হয়েছে। জমিতে পর্যাপ্ত রস আর খরা একসাথে থাকলে পাটের ফলন ভালোই হবে। তবে এ বছর খরার কারণে কিছু জমির পাট নষ্ট হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুদরত আলী জানান, সারিয়াকান্দিতে সর্বমোট ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে কৃষক বোরো ধান কেটে জমিতে পাট বীজ বপন করবেন।
যমুনা এবং বাঙালী নদী বিধৌত সারিয়াকান্দি পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে পাটের উৎপাদন খরচ খুবই কম অপরদিকে উৎপাদনের পরিমাণ খুবই বেশি। তাই বগুড়া জেলার মধ্যে সারিয়াকান্দিতে পাট চাষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
সোনালি আঁশ পাট এ বছর কৃষকদের সোনার মূল্যই দিয়েছে। প্রতি মণ পাট এখনও বাজারে ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে চড়া দামের কারণে কৃষকরা পিয়াজ, কাউন, খেরাছি ( চিনা), মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, ভুট্টা প্রভূতি ফসল কর্তন করে জমিতে পাট বীজ বপন করছেন। শ্রাবণ ভাদ্র মাসে পাট কর্তনের আশা থাকলেও কয়েক দিনের প্রখর রোদ সেই আশায় মরীচিকা ধরে দিয়েছে। পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত