ফরিদপুরের মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী রাজাপুর দেওয়ানকান্দি গ্রামের দরিদ্র দোকান কর্মচারী মো. মোজাফফরের মেয়ে চম্পা খাতুন হত্যা মামলার আসামিরা এখনো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আসামিদের মামলা তুলে নিতে অব্যাহত হুমকির কারণে দরিদ্র এ পরিবারটি এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। থানা পুলিশ বলছে, আসামিদের আটকের চেষ্টা করছেন তারা।
নিহতের পিতা ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, বিগত ১৭ বছর আগে চম্পা খাতুনের বিয়ে দেওয়া হয় আহম্মেদ আলী মোল্যার সাথে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক লোভী স্বামী বিভিন্ন সময় মারপিট করতো চম্পা খাতুনকে। মাঝে মধ্যেই কিছু টাকাও দেওয়া হতো আহম্মেদ আলীকে।
চম্পার পিতা অসহায় দরিদ্র হওয়ায় জামাইয়ের আবদার না মেটাতে পারায় চম্পাকে বেশ কয়েকবার বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে চম্পার স্বামী সেলুনের চাকরির কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যায়। সেখানে যাবার সময় এলাকার এক মহিলাও তার সাথে বিদেশে যায়। সেই থেকে ওই মহিলার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি করে। গত ৬ মাস আগে চম্পার স্বামী দেশে ফিরে আসে।
দেশে আসার পর দুইজনের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক চলতে থাকে। সম্প্রতি চম্পার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে বলে আহম্মেদ। কিন্তু চম্পা টাকা এনে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে মারপিট করা হয়। পরবর্তীতে চম্পার বাবাকে ফোন করে টাকা চান আহম্মেদ। টাকা দিতে না পারলে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন। গত ১ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে চম্পাকে ফোন করে ধুলদি রেলগেট এলাকায় আসতে বলে আহম্মেদ। স্বামীর কথা মতো চম্পা ধুলদি রেলগেট এলাকায় যায় এবং চম্পার সাথে আহম্মেদের ঝগড়া ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে আহম্মেদকে গালমন্দ করে এবং বৌকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। বাড়ি ফেরার পথে চম্পাকে তার স্বামী ও কয়েকজন মিলে গলা টিপে হত্যা করে একটি বাগানে ফেলে রাখে। রাতেই খবর পেয়ে নিহতের পিতাসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে চম্পার লাশটি মাটিতে শোয়ানো এবং একটি গাছের সাথে ওড়না বাঁধা দেখতে পান।
স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে যারার পর পরই আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মোজাফফর হোসেন জামাই আহম্মেদ আলীসহ ৩ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করে। মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আসামিরা এলাকায় থাকলেও পুলিশ তাদের আটক করছেনা। তাছাড়া মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, ঘটনার প্রায় একমাস হতে চললেও পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেও আটক করতে পারেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, মামলার আসামিরা প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার শেল্টারে থাকার কারণেই পুলিশ তাদের আটক করছেনা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই প্রদীপ কুমার জানান, আসামিদের আটকের জন্য চেষ্টা চলছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর