আবহাওয়া আর মাটির গুণাগুণের কারণে দেশের অন্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে ভাগেই পাকে। তাই মধু মাস জ্যৈষ্ঠ আসার অগেই সাতক্ষীরার সুলতানপুরের বড় বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিষমুক্ত সুস্বাদু গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি আম। জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিকতায় আজ ১৮ বৈশাখ থেকে গাছ থেকে পরিপক্ক পাকা আম পাড়া শুরু হয়েছে।
এবছরও সাতক্ষীরার বিষমুক্ত সুস্বাদু ৫০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হবে ইউরোপের বাজারে। এজন্য সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনি এবং দেবহাটাসহ মোট ৫টি উপজেলার ৩৫০ জন আম চাষীকে আগে থেকে কৃষি সম্প্রসাধন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষন দিয়ে আম উৎপাদন করা হয়েছে।
আগামীকাল থেকে (৩ মে) প্রথম ধাপে প্রথম বারের মত গোবিন্দভোগ আম যাওয়ার কথা ছিল জার্মানের ফ্রাঙ্গফুড শহরে। কিন্তু শিপমেন্ট জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। সব ঠিক থাকলে আগামী ৯ মে মঙ্গলবার থেকে প্রথম শিপমেন্টে কলারোয়ার উপজেলার কেরালকাতা গ্রামের মোঃ ডাবলু হোসেনের বাগান থেকে ১ মেট্রিক টন গোবিন্দভোগ আম রপ্তানি হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। পরবর্তীতে প্রতিবারের ন্যায় গোপালভোগ, হিমসাগর ও আমের রাজা ল্যাংড়া আম যাবে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইংল্যান্ডের বাজারে।
এদিকে সাতক্ষীরা শহরের বড়বাজারে জেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ থেকে ভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহন যোগে আসতে শুরু করেছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস, ক্ষিরসরাইসহ নানা জাতের আম। রং বে রঙের নানা প্রজাতির আমে ভরপুর হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার বড়বাজার। তবে করোনাকালিন লকডাউনের কারণে ক্রেতা শূন্য বাজার।
মন প্রতি ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে আমের বাজার মূল্য কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আম চাষিরা। সরেজমিনে বড়বাজার আমের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি মণ গাবিন্দভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ দরে। আর গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ দরে। আর দেশি আম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে।
আবহাওয়া ও গ্রীষ্মের তীব্র ক্ষরায় এবং দীর্ঘ দিনের অনাবৃষ্টির কারণে আমের আকৃতি এবার ছোট হওয়ায় দামও পাচ্ছে না কৃষকরা। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় আম ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা না আসার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়রা।
সাতক্ষীরা কাঁচা ও পাকামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রহিম বাবু জানান, সাতক্ষীরায় এ বছর আমের বাম্পার ফলন হলেও নায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। অতি ক্ষরায় ও বৈশাখের তীব্র তাপদাহে আম আকৃতিতে ছোট হওয়ার কারণে মালের দাম কমে গেছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, এবছর জেলায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৫ হাজার ২’শ ৯৯টি বাগানে আমের চাষ হয়েছে। পরিসংখ্যানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারন করা হয়। যা পার হেক্টরে ৯ থেকে ১০ টন ফলন হবে।
তিনি আরও জানান এবছর বাংলাদেশ থেকে ১৭’শ ৩১ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হবে। তার মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা থেকে ৫০০ মেট্রিক টন গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ,আম্প্রপালি, হিমসাগর ও ন্যাংড়া আম রপ্তানি হবে ইউরোপে। ১৪টি বায়ার কোম্পানি সাতক্ষীরার সুস্বাধু আম পর্যায়ক্রমে জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি, ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাজার জাত করবে। প্রথম ধাপে আগামী ৯মে কলারোয়ার কৃষক মোঃ ডাবলু হোসেনের বাগান থেকে এক মেট্রিক টন গোবিন্দভোগ আম প্রথম বারেরমত জার্মানে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল