মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে উপজেলার বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানা যায়, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে প্রচন্ড খরস্রোতা উওাল রাক্ষসী মধুমতি নদী।প্রায় সারা বছরই নদীতে ভাঙন অব্যাহত থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাই মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি। ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের ভবনের মাত্র ৫ গজের মধ্যে চলে এসেছে নদীটি। ভাঙন অব্যাহত থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে পুরো ভবনটাই বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীন জানান, বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত। এরপর নতুন একতালা ভবনটি নির্মাণ হয় ২০১৪ সালে। বিদ্যালয়ের ভবন থেকে নদী এখন মাত্র ৫ গজ দূরে অবস্থান করছে। যেকোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
একইভাবে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ৪৬ নং পশ্চিম চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৭ নং পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
পশ্চিম চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নব খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৮০ সালে স্থাপিত। এরপর ১৯৯৩ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টির টিনসেড ভবন থেকে নদী মাত্র ২-৩ হাত দূরে অবস্থান করছে। আর একতলা ভবন থেকে ২০ হাত দূরে রয়েছে নদী। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবার আর বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার সাহা বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৩৫ সালে স্থাপিত। এরপর ২০১০ সালে পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমান বিদ্যালয়টি থেকে মাত্র ৫০ হাত দূরে অবস্থান করছে মধুমতি নদী। এ বছর নদী যেভাবে ভাঙছে এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।'
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নদীগর্ভে কোন বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেলে দ্রুত অন্য কোন নিরাপদ স্থানে সেটি পুণঃস্থাপন করা হবে।
জানতে চাইলে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার বলেন, আপদকালীন বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বিদ্যালয়গুলো রক্ষা করতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে এই কর্মকর্তা আরো জানান, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনটি গত ২৫ মে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত হবে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন