২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:০১

সাতক্ষীরায় বৃষ্টিতে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় বৃষ্টিতে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত

সাতক্ষীরায় বৃষ্টিতে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত

সাতক্ষীরায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন পানি থইথই করছে। গত রবিবার ও সোমবার দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। গত তিন দিনেও নিম্নাঞ্চল ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এখনো জেলার সাত উপজেলার প্লাবিত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় হাঁটু থেকে কোমর পানি রয়েছে। ফলে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষকরা।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বলছে, স্কুল ও কলেজের আঙিনা থেকে পানি নেমে না গেলে জেলার প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করা সম্ভব হবে না। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। স্কুল খোলার আনন্দে শিক্ষার্থীরা নতুন করে প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু সেই আনন্দে সাতক্ষীরায় এবার ‌‘ছাঁই’ দিয়েছে আশ্বিনের বৃষ্টি।

জেলা সদরের ভোমরা রাশেদা বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ছাপিয়ে পানি উঠেছে শ্রেণিকক্ষে। বিদ্যালয়টির নিচতলা সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত। মাঠের কোমর পানি থাকায় বৃহস্পতিবার শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাই অন্যত্র ক্লাস করানোর কথা ভাবছে শিক্ষা অফিস। কিন্তু নিকটস্থ কোনো ভবন না থাকায় সেটিও আপাতত সম্ভব হয়নি।

এদিকে, সাতক্ষীরা শহরে নারীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র বেসরকারি কলেজ ছফুরননেছা মহিলা কলেজ। কলেজটি বর্তমানে পানিতে ভাসছে। এখনো শ্রেণিকক্ষে জমে আছে হাঁটু পানি। এই কলেজের সামনে (সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক) সড়ক বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে কিছু ভূমিহীন নামধারী মানুষ বসতবাড়ি নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে রেখেছে। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই।

ছফুরননেছা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুন নাহার জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই কলেজের ভেতরে হাঁটু পানি জমছে। পানি নিষ্কাশনের সব পথ বন্ধ। অফিসের যাবতীয় কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জরুরিভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও  কলেজের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবিরকে পদক্ষেপ দাবি করেছেন অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে, সাতক্ষীরা সদরের মাছখোলা হাইস্কুল, মাছখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে ডুবে আছে কয়েক মাস।

এদিকে, জেলা সদরের বড়দল প্রাইমারি স্কুলের অবস্থাও একই। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলতা মোবারকনগর বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া কেবি আহসানিয়া জুনিয়র স্কুল, নলতা শরীফের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট রয়েছে পানিতে ‍ডুবে। পানি নিষ্কাশনের পথ দখল করে মাছের ঘের করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পানিতে নিমজ্জিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার ভ্যানে চড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পানি পার হয়ে স্কুলের বারান্দায় পৌঁছায়। পানি পার হতে না পেরে অনেকেই বাড়ি ফিরে যায়। কালিগঞ্জ উপজেলার ভদ্রখালি প্রাইমারি স্কুলের মাঠেও এখন হাঁটু পানি।

আশাশুনির প্রতাপনগর ফাজিল মাদ্রাসা, প্রতাপনগর ইউনাইটেড একাডেমি ও কল্যাণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুড়িকাহুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুড়িকাহুনিয়া মহিলা মাদ্রাসা, প্রতাপনগর মহিলা মাদ্রাসা, কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতাপনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কোমর পানিতে ডুবে আছে।

সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক দিনের ভারি বৃষ্টিতে পানি উঠে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় গত দুই দিন পাঠদান করা সম্ভব হয়নি। জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, দেবহাটা, তালা ও কলারোয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস করানো সম্ভব হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থায় ক্লাস করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শুধু হাইস্কুল নয়, মাদ্রাসা ও প্রাইমারি স্কুলও জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। সেখানেও শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর, বিজিবি ক্যাম্প, ঋশিল্পী, বিসিক শিল্পনগরীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। পানি থইথই করছে এসব সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর