ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী (বাংলাদেশ-ভারত) হালুয়াঘাট উপজেলায় একপাশে সুউচ্চ গারো পাহাড় আর বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের নিচু অংশ জুড়ে আবাদী জমিগুলোতে ছেয়ে আছে সবুজে আচ্ছাদিত সবজির মাচা। প্রতিটি মাচায় ঝুলছে ঝিঙে, করলা, বরবটি, লাউসহ শীতকালীন সবজি। গ্রামীণ রাস্তার ধার থেকে শুরু করে মাঠজুড়ে হলদে ফুলে সর্বত্র শোভা পাচ্ছে আগাম চাষ করা সবজির ক্ষেত। চিরচেনা সবুজ দৃশ্য যে কোনো মানুষের নজর কাড়ছে। আর স্বল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফার আশায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ঝুকছেন এ অঞ্চলের সহস্রাধিক কৃষক। সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সব ধরনের সহযোগিতা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার জুগলী, ভুবনকুড়া ও গাজীরভিটা এ ৩টি ইউনিয়নে বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্বল্প জমির দরিদ্র কৃষকরা। রবি মৌসুমে অত্র উপজেলায় ১২শত ৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে ঝিঙে, করলা ১ শত হেক্টর জমিতে, শীত লাউ ২শত ৫০ হেক্টর জমিতে, শসা ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে, আলু ৮০ হেক্টর জমিতে, সরিষা ১শত ৪০ হেক্টর জমিতে, ডাল জাতীয় শস্য ৫০ হেক্টর জমিতে, মরিচ পেঁয়াজ ও রসুুন ১ শত ৮০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও ধনেপাতাসহ নানা জাতের শাক সবজি ১শত হেক্টর জমিতে চাষ আবাদ করা হয়েছে।
এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সবজি চাষের জন্য উপযোগী। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে সবজি চাষের পরিধি। এছাড়াও পাইকারী পর্যায়ে সবজির বাজারমূল্যও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।
আগাম সবজি চাষ নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে, ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে সবজি চাষ আর সৃষ্টি হয়েছে কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা। খেত থেকে তুলে সড়কের পাশে স্তুপ করে রাখছেন কৃষক-শ্রমিকরা। সেখান থেকে কিনে ওজন দিয়ে কার্টুনজাত করে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। পিকআপ ভ্যানে করে এ সবজি চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার আড়তে। কৃষকদের উৎপাদিত আগাম শীতকালীন সবজিগুলো সরাসরি পাইকাররা কিনে নিয়ে যাওয়ার কারণে কিছুটা দুর্ভোগ কমেছে বলে অভিমত স্থানীয়দের।
সবজি আবাদ করা উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়নের কড়ইতলী এলাকার খলিলুর রহমান জানান, প্রত্যেক বছরের ন্যয় এবারও ৪০ শতাংশ জমিতে ঝিঙে আবাদ করেছেন। ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফল ধরা শুরু হয়। আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। তবে দাম ভালো থাকলে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। প্রতিমন ঝিঙে বিক্রি করা হচ্ছে ১১শ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত। যা পুরো আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফলন থাকবে।
একই এলাকার আছিয়া বেগম বলেন, কিছুদিন আগে এলাকায় নিয়মিত কাজ ছিল না। এখন সারা বছরই সবজির আবাদে শ্রম দিচ্ছেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে তার সংসার খরচ চলে যায়।
স্থানীয় কৃষক ইন্নছ আলী জানান, কম সময়ে খরচের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে দিন দিন সবজি চাষের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। আগে তারা শুধু ধান চাষে নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ধানের পাশাপাশি সবজিও আবাদ করছেন। কম পরিশ্রম ও অল্প পুঁজিতে ভালো ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় সবজির চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিভিন্ন গ্রামের মাঠে দৃষ্টিনন্দন সবজি চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মত বীজ ও সার সংগ্রহের ফলে সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষককে নিরাপদ সবজি চাষে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় সঠিক উৎপাদন সক্ষমতা ও চাষী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারী পর্যায়ে সবজির বাজারমূল্যও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, শুধু কৃষি জমিতে নয় একই সাথে গ্রামে কৃষকদের সবজি চাষে আগ্রহী করতে বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। মাঠের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতে সবজি আবাদের জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল