ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় শাহজাদাপুর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের শিশু থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস একজন শিক্ষককেই সামলাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৭৪ জন। একটি ক্লাসে শিক্ষক গেলে অন্য ক্লাসগুলো ফাঁকা থাকে। উপজেলা সদরের আসপাশে বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে ৮/৯ জন শিক্ষক। অথচ এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও ওই বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষক জয়ন্ত কুমার ধরকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আনা হয়েছে।
গত সোমবার (২৫ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী টিনা আক্তারকে ক্লাস নিতে দেখায়। শিক্ষক না থাকায় সে মাঝে মধ্যে ক্লাস নিচ্ছেন। ২০১৮ সাল থেকে ১ জন শিক্ষক দিয়েই জোড়াতালির মাধ্যমে চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস নিচ্ছেন একজন শিক্ষকই। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে চলেছেন সহকারী শিক্ষক শেফালী বেগম।
বিদ্যালয়ে ৯ শিক্ষকের পদ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৪। এদের মধ্যে সহকারী শিক্ষক মনি দাস গত আগষ্ট মাস থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নার্গিস আক্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিও মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে ১/২ ঘণ্টা পর চলে যান বলে অভিযোগ। বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় মুঠোফোনে যোগযোগ করলে তিনি জানান অফিসের কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসেছি।
সহকারী শিক্ষক জয়ন্ত কুমার ধর ২৭মার্চ ২০১৭ সালে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। স্কুলের শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় সহকারী শিক্ষক জয়ন্ত কুমার ধর এর নাম লেখা থাকলেও করোনাকালীন সময়ের পর বিদ্যালয় খোলা সময়ে হাজিরা খাতায় উপস্থিতির সাক্ষর নেই। জয়ন্ত কুমারের মত আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকরাও উপজেলা শিক্ষা অফিসে সময় কাটান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস একজন শিক্ষকই নিচ্ছে। অনেক সময় ম্যাডাম আমাদের পড়া দিয়ে আবার অন্য ক্লাসে চলে যায়। এজন্য স্যার আমাদের পড়া ভালোভাবে আদায় করার আগেই ক্লাসের সময় চলে যায়। সামনে আমাদের পরীক্ষা, প্রস্তুতিও নেই তেমনটা। স্যার কম থাকায় অনেক ছাত্র অন্য বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট থাকলেও শিক্ষা অফিসার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাদেম বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতি বহু দিন যাবৎ এ সমস্যা চলছে। শিক্ষকদের সাথে বহুবার আলোচনা করেছি, তবুও তাহারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেনা।
সরাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ বলেন, ১ জন শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। উপজেলা শিক্ষা অফিসে জনবল কম থাকায় মৌখিক নির্দেশে এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জয়ন্ত কুমার ধরকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কাজ করতে হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল