কক্সবাজারের টেকনাফে এক রেস্তোঁরার মালিককে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপহরণের তিন দিন পর মুক্তিপণের টাকার বিনিময়ে ওই ব্যবসায়ী ছাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বজনরা। অপহৃত ছৈয়দ আলম (৫০) টেকনাফ পৌরসভার দক্ষিণ জালিয়াপাড়া এলাকার মৃত আমির আহম্মদের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া নেচারপার্ক এলাকায় ছৈয়দ আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান তার স্ত্রী হালিমা বেগম।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের টেকনাফের দমদমিয়া জেটি ঘাট থেকে ইজিবাইকে বাড়িতে ফিরছিলেন ছৈয়দ আলম। পথে স্থলবন্দর সংলগ্ন ১৪ নম্বর সেতু এলাকায় মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মুক্তিপণ হিসেবে ১২ লাখ টাকা দাবি করেছিল তারা। স্বজনেরা ওই দিন রাতেই টেকনাফ মডেল থানা–পুলিশকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করেন।
ছৈয়দ আলমের স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, অপহরণের পর তার স্বামীকে দমদমিয়া এলাকার গহিন পাহাড়ে জিম্মি করে রাখা হয়। তারা মোবাইলে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। না দিলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। পরে টাকার লেনদেন নিয়ে অপহরণকারীদের সঙ্গে মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে তারা আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে ছৈয়দ আলমকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়।
অপহৃতের স্ত্রী হালিমা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অপহরণকারীদের কাছে দাবি করা টাকা পৌঁছাতে একটি গাড়িযোগে তার বড় ছেলে মো. রাসেল টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় যান। টাকাগুলো নিতে অপহরণকারীরা কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করে। একপর্যায়ে দমদমিয়া নেচার পার্কের ভেতরে যেতে বলা হয়। পরে নগদ আড়াই লাখ টাকা নিয়ে অবস্থান করার একপর্যায়ে মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী দুই যুবক সেখানে উপস্থিত হয়। টাকাগুলো তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর স্বামী ছৈয়দ আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হালিমা আরও বলেন, তার স্বামীকে অপহরণকারীরা নির্যাতন করেছে। ছাড়িয়ে আনার পর তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হয়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে টেকনাফ থানায় হাজির হয়ে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে জানানো হয়েছে।
ছৈয়দ আলমের ছেলে মোহাম্মদ রাসেল অভিযোগ করেন, গত সোমবার রাতে ঘটনার খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিশকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ পরে তাদের সঙ্গে আর কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি।
ছৈয়দ আলম বলেন, মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা। তাদের ভাষাও রোহিঙ্গাদের মতো। তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। গহিন পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানায় জিম্মি করে মুক্তিপণের জন্য তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। গত তিন দিনে শুধু একবেলা ভাত খেতে দিয়েছিল। তবে ছেড়ে দেওয়ার সময় এসব বিষয় নিয়ে র্যাব বা পুলিশের কাছে না যাওয়ার জন্য হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমানের সরকারি মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এর আগে গত মঙ্গলবার ওসি হাফিজুর রহমান বলেছিলেন, তারা বিষয়টি শুনেছেন। ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত