২৯ নভেম্বর, ২০২১ ১১:৪৬

নববধূ নিয়ে ফেরার পথে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে বরের ঝাঁপ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

নববধূ নিয়ে ফেরার পথে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে বরের ঝাঁপ

প্রতীকী ছবি

চুয়াডাঙ্গায় চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে লাফ দিয়ে বোরহান উদ্দিন (২১) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। গতকাল রবিবার (২৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার কিছুক্ষন পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

নিহত বোরহান উদ্দিন মেহেরপুর সদর উপজেলার নবগঠিত বাড়াদি ইউনিয়নের নতুন দরবেশপুর গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মিয়াজানের ছেলে ও মেহেরপুর সরকারী কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের কুলপালা নামকস্থানে এ ঘটনাটি ঘটে। 

পরিবারের সদস্যরা জানায়, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের জাহাঙ্গীরের মেয়ে পপি খাতুনের সাথে বোরহান উদ্দিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ২৭ নভেম্বর দুই পরিবারের অগোচরে তারা বিবাহ করে ফেলেন। এরপর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার সিংহাটি গ্রামে বোরহান উদ্দিনের চাচাতো বোনের বাসায় গিয়ে উঠে তারা। 

এদিকে, ওইদিন রাতে বাড়িতে না আসায় পরিবারের সদস্যরা বোরহানকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। রাতে মেহেরপুর সদর উপজেলার সিংহাটি গ্রামে চাচাতো বোনের বাড়িতে অবস্থান করছে বলে জানতে পারে বোরহানের বাবা। পরে রাত ১০ টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছালে তাদের বিবাহের বিষয়টি জানতে পারে বোরহানের পরিবারের সদস্যরা। 

নিহত বোরহানের মামাতো ভাই আলামিন বলেন, ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে জানিয়ে বোরহানের বাবা আমাকে ডাকে। তার বাড়িতে পৌছালে  রাত ১০ টার দিকে আমি মোটরসাইকেলে এবং একটি মাইক্রোবাসযোগে বোরহানের মামাতো ভাই ও তার বাবা সেই চাচাতো বোনের বাড়িতে যায়। সেখানে পৌছানোর পর বোরহানের পিতা তাদের বিয়ে মেনে না নিয়ে বোরহানকে নিয়ে চলে আসতে যায়। পরে দুই পরিবাবের অন্যান্য সদস্যরা বোরহানের বাবাকে বোঝালে তাদের বিয়ের সম্মত জানিয়ে ছেলেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলে। স্ত্রীকে রেখে একা বাড়িয়ে যাবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয় বোরহান।   রাতেই মাইক্রোবাসযোগে নব্য বিবাহিতা স্ত্রী পপি খাতুনকে নিয়ে তার বাবা নতুন দরবেশপুর গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হয়। যাওয়া পথে কুলপালা নামকস্থানে পৌঁছালে চলন্ত মাইক্রোবাসের জানালা থেকে লাফ দেয় বোরহান। এসময় সামনে থেকে আসা একটি ট্রাকের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়। 

তিনি আরও বলেন, পপি খাতুনের এর আগে দুইবার বিয়ে হয়েছিল। এজন্য ছেলের বাবা প্রথমে মেনে নিতে না পারলেও পরে সবার অনুরোধে মেনে নিয়েছিল। মাইক্রোবাসে আসার সময় এই নিয়ে ছেলেকে কটুক্তি করায় মান পিতার উপর অভিমানে আত্মহত্যা করেছে বোরহান উদ্দিন। দুই ভাই বোনের মধ্যে বোরহান ছিল বড়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

এদিকে সদর হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, আহত অবস্থায় বোরহানকে হাসপাতালে নেয়ার পর তারা চিকিৎসকে জানায়- ব্যাডমিন্টন খেলার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। আলামত দেখে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরতদের মনে সন্দেহ হয়। পরে তাদের চাপের মুখে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে ঝাপিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। 

এদিকে, দুই পরিবার তাদের বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়ার পরও শুধুমাত্র পিতার কটুক্তির কারণ হিসেবে এই আত্মহত্যার ঘটনা রহস্যজনক মনে করেছেন স্থানীয়রা। পুলিশের সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে আত্মহত্যার ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন হবে বলে দাবি স্থানীয়দের। এ বিষয়ে জানতে নিহত বোরহানের বাবা মিয়াজান ও সদ্য বিবাহিত পপি খাতুনের মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাজিদ হাসান বলেন, রবিবার রাতে তারা ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে জানায় ব্যাডমিন্টন খেলার সময় পড়ে গিয়ে বোরহান আঘাত পেয়েছে। আঘাতের আলামত দেখে সন্দেহ হলে আমাদের চাপাচাপিতে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি জানায় তারা। বোরহানের দুই পা ভেঙ্গে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া আছে। হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পর জরুরি বিভাগের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়োজিত পুলিশ লাইন্সের নায়েক বলয় বিশ্বাস নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানায়, বোরহান তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীসহ তার বাবা ও মামাতো ভাইয়ের সাথে মেহেরপুরে যাচ্ছিল। এসময় মাইক্রোবাসের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বোরহান। পরে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কিছুক্ষন পর তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য বোরহানের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। 

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ঘটনাটি আমি শুনিনি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর