গাজীপুরের অটোরিক্সা চালক শরিফুল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হত্যাকান্ডের সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ক্লু-বিহীন হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। হত্যাকান্ডে দায় স্বীকার করে দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় আসামি মো: শফিকুল ইসলাম (২৫), মো: হানিফ (২৭), আফ্রিদি (১৯), মো: রাকিব হোসেন (২২), মো: রাজিব শেখ (২২) ও মো: জুয়েল রানা (২৭) কে গাজীপুরের শ্রীপুরের বনখড়িয়া ও ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত আফ্রিদি ও শফিকুলকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে তারা নিজেদের জড়িয়ে ও অন্য আসামিদের জড়িত থাকার কথা জবানবন্দিতে বলেন। অপর আসামি রাকিব হোসেন, রাজিব শেখ, জুয়েল রানা ও হানিফকে গ্রেফতার করে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সুপার জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বনখড়িয়া গ্রামের মৃত নায়েব আলীর ছেলে মো: শরিফুল ইসলাম (২০) ভাড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত ৯ ডিসেম্বর (২০২১) সকাল ১০টার দিকে শরিফুল অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ায় চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। ওইদিন বিকেলে বনখড়িয়া এলাকার রাস্তার পাশে অটোরিকশাটি দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে অটোরিকশার পেছনে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে বিষয়টি অটোরিকশার মালিক মো: মোশারফ হোসেনকে জানান স্থানীয় এক ব্যক্তি। বিষয়টি মোশারফ হোসেন অটোচালক শরিফুলের বড় ভাই মো: সেকান্দারকে জানান। ওই দিন রাতে শরিফুল বাড়িতে না ফেরায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ের পরদিন (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অটোরিকশা উদ্ধারের জায়গা থেকে সামান্য দূরে গজারি বনের ভেতর থেকে তার (শরিফুলের) গলাকাটা লাশ দেখতে পায়। নিহতের স্বজনরা খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। ওই দিনই নিহতের বড়ভাই মো: সেকান্দার বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর শ্রীপুর থানা পুলিশ, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করে।
পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আরো জানান, ভিকটিম শরিফুল ঘটনার ১০ থেকে ১২ দিন আগে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ভাওয়াল মির্জাপুর গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের মেয়ে কারিমাকে (১৮) পরিবারের মতামত ছাড়াই গোপনে বিয়ে করেন। গত ১০ ডিসেম্বর কারিমাকে পারিবারিকভাবে অনুষ্ঠান করে শরিফুলের বাড়িতে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারিমার বড় ভাই খোরশেদ আলমের শ্যালক রাজিব শেখ (২২) কারিমাকে পছন্দ করতেন। এ ছাড়া কারিমার বড় দুই বোনের স্বামী রাকিব হোসেন ও জুয়েল রানাসহ পরিবারের সদস্যরা কারিমার বিয়েতে রাজি না থাকায় তারা নিহত শরিফুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছমত ওরফে তারেকের সাথে যোগাযোগ করে ভিকটিমকে হত্যার জন্য এক লাখ টাকায় চুক্তি করে। চুক্তি মোতাবেক নিহত শরিফুলকে সিগারেট খাওয়ানোর কথা বলে আছমতসহ সহযোগী অন্যরা বনখড়িয়া বাজার সংলগ্ন রাস্তার মাঝামাঝি গজারী বনের ভেতর নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে ভিকটিমসহ সকলে সিগারেট ও গাঁজা সেবন করার এক পর্যায়ে শরিফুলকে চেপে ধরে মাটিতে ফেলে গলায় ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।
বিডি প্রতিদিন/এএম