চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দিতে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ৬০ লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। নির্বাচনের আগে সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সামছুল আলম বাবুল পাটওয়ারীর অভিযোগটি স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়। তবে এবার ভোল পাল্টালেন এই নেতা।
শুধু নির্বাচনে জিততেই এ ধরণের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন বলে শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন বাবুল পাটওয়ারী। হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এসময় বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা পিংকু আমার কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। নির্বাচনের জেতার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে টাকা দাবির বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি বাবুল। লিখিত বক্তব্যটিও পাঠ করে শোনাতে রাজি হননি। প্রশ্ন করলেই তিনি সাংবাদিকদের ওপর রেগে যান। বলেন, 'নো কমেন্ট'। ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'লিখিত বক্তব্যটি পড়ে মুখস্ত করেন।'
সংবাদ সম্মেলনের আগ মুহূর্তে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান বাবুল ও পরাজিত নৌকার প্রার্থী নুরুল মোরছালিন মাসরুর সমঝোতা বৈঠক করেন। সেখানে লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী ও হাজিরপাড়া হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠকে পিংকুর মধ্যস্থতায় বাবুল ও মাসরুর কোলাকুলি করেন এবং তারা মিলেমিশে থাকবে বলে বক্তব্য দেন। তবে এটি নাটকীয় সমঝোতার ঘটনা বলে প্রকাশ পেয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব না দেওয়া ও বাবুলের লোকজনের হট্টগোল তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। একপর্যায়ে বাবুল ও মাসরুর নির্বাচনী সহিংসতায় পরস্পরের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌকার মনোনয়ন তিনিই দেন। আমাদের কারো মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা নেই। টাকা দাবি বা নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আমার। বিদ্রোহী চেয়ারম্যানও আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। চেয়ারটি আওয়ামী লীগের বাইরে যায়নি। এখন সবাই মিলেমিশে থাকাটা আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রসঙ্গত, ২৬ ডিসেম্বর হাজিরপাড়া ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম বাবুল পাটওয়ারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরআগে ১৫ ডিসেম্বর তাকে হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। ভোটের আগেরদিন ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাবুল বলেন, দলীয় মনোনয়নের জন্য জেলা সভাপতি পিংকু আমার কাছে ৬০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তা দিতে না পারায় তার চাচাতো ভাই ও রাজাকারপুত্র মাসরুরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে পিংকু আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল