ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে ভয়াবহ নদীভাঙনে সর্বস্ব হারাচ্ছেন মানুষ। পদ্মানদীর আগ্রাসী ভাঙনে প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে গ্রাম, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।
আশি বছর বয়সী চান্দু মিস্ত্রি প্রতিদিন পদ্মার পাড়ে বসে দোয়া করছেন। তার কথায়, “গাঙে পাঁচ বার বাড়ি ভাঙছে, জমি নাই, বাপ-দাদার ভিটাও নদীতে গেছে। এবার যদি আবার ভাঙে, শেষ বয়সে কোথায় যামু, কি খামু।” শুধু চান্দু মিস্ত্রিই নন, পদ্মাপাড়ের হাজারো মানুষ একইভাবে আর্তি জানাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী চক্র পদ্মা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে। এ কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভাঙন তীব্র হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার একর জমি, শতাধিক ঘরবাড়ি, ইমাম আলীর ডাঙী, জলিল সরদারের ডাঙী, আহমদ বেপারীর ডাঙী, শুকুর আলীর ডাঙী, ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙীসহ একাধিক গ্রাম। নদীতে তলিয়ে গেছে চারটি বাজার, একটি হাট, কয়েকশ কবর ও বিদ্যুতের লাইন। হুমকির মুখে রয়েছে তিনটি হাইস্কুল, কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি আশ্রয়কেন্দ্র, দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ২টি সেতু, ১২টি রাস্তা, ২০টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা, ৫টি কিন্ডারগার্টেন, একটি আদর্শ গ্রাম, একটি গুচ্ছগ্রাম, বেশ কিছু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, একটি ইটভাটা, দুইটি গবাদিপশুর কেল্লা ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি।
হাজী আবদুল জালাল, আনোয়ার খাঁ, শফিউদ্দিন, রাহেলা বেগম, জমিলা খাতুনসহ অনেকে জানান, “প্রতি বছর নদী ভাঙছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই। যেভাবে ভাঙন চলছে, কয়েক বছরের মধ্যেই নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।”
সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান বলেন, “সরকার নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজ হয়নি। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন আর থাকবে না।”
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, “ভাঙনের বিষয়টি সরেজমিনে দেখা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলা হবে। স্থায়ী বাঁধের প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক