অভাবের তাড়নায় যমজ সন্তানের একটিকে বিক্রি করে দিতে চাওয়া রাজন-সুমা দম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছে নেত্রকোনা প্রশাসন। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সমাজকর্মীরা বলছেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও দরিদ্র বাবা-মায়ের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নেত্রকোনা পৌর শহরের আনন্দবাজার এলাকার একটি ছাপড়া ঘরে বসবাস করেন রাজন, সুমা দম্পতি। চারপাশের দেয়াল ত্রিপালে ঢাকা, সেটিও দিয়েছে ইউনিসেফ। এর আগে প্লাস্টিক দিয়ে ঘর মোড়ানো ছিল। তাদের সংসারে আগেই ছিল ৬ বছর বয়সী ও ৩ বছর বয়সী দুই ছেলে। দুই মাস আগে জন্ম নেয় যমজ সন্তান—এক ছেলে ও এক মেয়ে। এর পরপরই তিন লাখ টাকায় একটি সন্তান বিক্রির দরদাম হয়।
খবর পেয়ে শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মীরা হস্তক্ষেপ করেন। পরে জেলা প্রশাসনের শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান নিজে গিয়ে পরিবারের খোঁজ নেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে খাবার, নগদ অর্থ সহায়তা দেন এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে নানা উদ্যোগ নেন।
রাজন জানান, কাজ না পেলে সংসার চলে না। তাই সন্তান বিক্রি করে একটি গাড়ি কিনে সংসার চালাতে চেয়েছিলেন। স্ত্রী সুমা বলেন, বুকের দুধ আসে না, কিনে খাওয়াতে হয়—তাই রাজি হয়েছিলেন।
শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী আশরাফুল আলম খান সানী বলেন, খবর পেয়ে তাদের কাউন্সেলিং করা হয়। তাদের বাল্যবিয়ে, জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র কিছুই নেই। পরে বিষয়টি শিশু কল্যাণ বোর্ডে উত্থাপন করলে জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নেন।
জেলা প্রশাসক জামান বলেন, “অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। তাৎক্ষণিক খাবার ও অর্থ সহায়তা দিয়েছি। দুই যমজ শিশুর আগামী এক বছরের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া বাবাকে একটি রিকশা বা দোকান করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঘরও তৈরি করে দেওয়া হবে। বড় ছেলেকে শিশু পরিবারে দিয়ে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
এ ঘটনায় এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। রাজন-সুমা দম্পতিও প্রতিজ্ঞা করেছেন আর কখনো সন্তান বিক্রি করবেন না।
বিডি প্রতিদিন/আশিক