বগুড়ার বাজারে সবজির সরবরাহ থাকলেও দামের আগুনে দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। আলু ও পেঁপে ছাড়া ৮০ থেকে ১৪০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি। প্রায় সব সবজির দাম লাগামহীন। ব্যবসায়ীদের দাবি, টানা বৃষ্টি আর সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগাম শীতের সবজি উঠলেই আবার দাম কমে যাবে।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম এত বেশি যে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য কেনা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে ঝুঁড়ি ভর্তি বাজার করা যেত, এখন সেখানে সামান্য কিছু সবজি কিনতেই খালি হয়ে যাচ্ছে পকেট। ৮০ টাকা থেকে ১৪০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। সবজির পাশাপাশি মুরগির বাজারেও চড়া দাম। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। আর সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। ডিমের ডজন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকায়।
জানা যায়, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সবজির জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে গত কয়েক দিন ধরেই সবজির দাম চড়া। কৃষক কিছুটা সহনশীল দামে তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করলেও মধ্যস্বত্বভোগী (ব্যাপারীরা) সেই সবজি কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে তা দ্বিগুণ দামে তুলে দিচ্ছেন। এ কারণেও সবজির দাম বাড়ছে।
শুক্রবার বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, কলোনী, খান্দার ও বকশি বাজারসহ বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধুমাত্র আলু আর পেঁপে ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
বাজারে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন সিম প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, তরি ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, পিঁয়াজ ৭০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৬০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা ও পেঁপে ২০ টাকা এবং বই কচু ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারে দেশি আদা ১৪০ টাকা ও রসুন ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, বিআর-৪৯ চাল ৬২ থেকে ৬৩, স্বর্ণা ৫৮ থেকে ৬০, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৭৫, নাজিরশাইল ৮৫ থেকে ৮৬ এবং মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় বেচাকেনা হতে দেখা যায়। এদিন ডিমের হালি ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালী মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭২০ থকে ৭৫০ এবং খাসির মাংসের কেজি ১০৫০ থেকে ১১শ’ টাকা।
বাজারে ইলিশের কেজি সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে ২২০০ টাকা। আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের সিলভার কার্প মাছ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, তিন কেজি ওজনের কাতল মাছ ৩৫০ টাকা এবং দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের রুই মাছ ৩শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়াও চিংড়ির কেজি ৭০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, পাবদা আকারভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
বগুড়া শহরের ২ নং রেলঘুনটি এলাকার খুচরা বিক্রেতা বিপ্লব জানান, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সরবরাহ ঘাটতির কারণে সবজির এমন চড়া দাম। এছাড়াও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মে সবজির দাম সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে আগাম শীতের সবজি উঠলেই আবার দাম কমে যাবে।
বাজার করতে আসা আব্দুর রাজ্জাক জানান, এখন কাঁচা পেঁপে ও আলু ছাড়া কোনো সবজিই ৮০ টাকার নিচে নেই। পটল, করলা, গাজর, শসা, ঝিঙে, ঢেঁড়স কিংবা বেগুন সবই ৮০ টাকা থেকে সেঞ্চুরির ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই