কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য জন্মসনদ নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আকতার কামাল নামে একজন পল্লী চিকিৎসক। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
অভিযোগ উঠেছে টেকনাফ উপজেলা ৫নং বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকনের স্বাক্ষর জাল করে একজন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য জন্মসনদ নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন পল্লী চিকিৎসক আকতার কামাল। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন আকতার কামাল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে নিয়োজিত থাকায় তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারে এ ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনসহ দুজনকে এজাহারনামীয় আসামি করে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিরা হলেন পল্লী চিকিৎসক আকতার কামাল ও রোহিঙ্গা নাগরিক নুর আলম।
জানা যায়, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাহিদ আলমের বাবা নুরুল ইসলামের পালিত ছেলে নুর আলম। তবে সে একজন রোহিঙ্গা নাগরিক। শিশুকাল থেকে নিজের ছেলের মতো লালন-পালন করে বড় করেছেন নুরুল ইসলাম। গত ইউপি নির্বাচনের আগের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিনের আমলে জন্ম সনদের জন্য আবেদন করা হয়। এরমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ নুরুল আলম স্বাক্ষর দিয়ে অনলাইন করে দেন। জন্ম সনদ প্রদানে ইউপি সচিব নুরুল আলম ও তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ এহসান জড়িত রয়েছেন। বিষয়টি বর্তমান চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন জানতে পারেন। পরে বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান নিজে তদন্ত শুরু করলে পল্লী চিকিৎসক আকতার কামালের যোগসাজসে বর্তমান চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে জন্ম সনদ প্রস্তুত করেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে শামলাপুর বাজার থেকে রোহিঙ্গা নাগরিক নুর আলম ও পল্লী চিকিৎসক আকতার কামালকে স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে চেয়ারম্যান নিজে তাদের আটক করে একটি দোকানের কক্ষে আটকে রাখেন। পরে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে খবর দিলে পুলিশ পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ঘটনাস্থলে এসে দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে পিটুনির শিকার আকতার কামাল বলেন, আমি সদ্যসমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আজিজ উদ্দিনের নৌকা মার্কা প্রতীকের পক্ষে ভোট করেছি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন খোকন। সেই সূত্র ধরে, মূলত চেয়ারম্যান শামলাপুর বাজারে শত শত মানুষের সামনে আমাকে পিটিয়েছে এবং রশি দিয়ে বেঁধে প্রায় দুই ঘণ্টা একটি দোকানের ভিতর আটকে রাখা হয়েছিল। আমি কারো স্বাক্ষর জাল করিনি। এ বিষয়ে কোনো ভাবে আমি জড়িত নয়। আমাকে যে ছেলেটার কথা বলা হচ্ছে, আমি তাকে চিনিও না। জন্মসনদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমি কি ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বশীল ও কর্মচারী কিনা ?
এ ব্যাপারে বাহারছড়া ইউপির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন বলেন, রোহিঙ্গা নাগরিককে জন্মসনদ পাইয়ে দিতে আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগ আনা হচ্ছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্ম সনদ দিতে সহযোগিতার পাশাপাশি পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেছেন চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে অভিযুক্ত দুজনকে কক্সবাজার বিজ্ঞ হাকিম আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল