লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের হিরামানিক এলাকায় চলমান বৈশাখী মেলার পার্শ্ববর্তী জুয়ার আসরে ধাওয়া করে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে গ্রেফতারের পরই নির্যাতন চালালে পুলিশ হেফাজতে রবিউল(২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে স্বজনরা আহাজারি করতে থাকে।
এ ঘটনায় জেলার মহেন্দ্রনগরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। এসময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা।
বৃহস্পতিবার রাত ১ টার দিকে সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের চরকেরথান এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। আটকের পরপরই মারপিট করা হলে রবিউল অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার হিরামানিক এলাকার বৈশাখী মেলায় জুয়া খেলা চলছিলো। এমন খবরে পুলিশ মেলায় অভিযান চালালে জুয়াড়িরা দিকবিদিক পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে মহেন্দ্র নগর কাজীরচওড়া এলাকার দুলাল খানের ছেলে রবিউল খান (২৫) এবং দক্ষিণ হিরা মানিক এলাকার মৃত রসনির ছেলে প্লোল্লাদ রায়কে জুয়ায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে আটক করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, পুলিশ আটক দুজনকে ভ্যানে উঠানোর চেষ্টা করলে রবিউল ভ্যানে উঠতে রাজি হয়নি। পরে তাকে ঘটনাস্থলে নির্যাতন করা হয় এবং সেখানে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ রবিউলকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের চাচা মনসুর আলী জানান, 'রবিউল জুয়ার সাথে জড়িত নয়। বৈশাখী মেলা দেখতে গিয়েছিলো সে। মেলার পাশে জুয়া চলছিল। পুলিশ জুয়াড়িদের ধরতে ধাওয়া করে এবং জুয়াড়িরা পালিয়ে যায় আর মেলায় ঘুরতে যাওয়া রবিউলসহ দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে রবিউল পুলিশের ভ্যানে উঠতে না চাওয়ায় বেদম মারপিট ও লাথি মারে এতে মাটিতে পড়ে যায় রবিউল। এসময় পুলিশের নির্যাতনে রবিউলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।'
এলাকাবাসী জানান, আটকের পরই রবিউলকে প্রচণ্ড মারপিট করে পুলিশ, এতে সে গুরুতর আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে রবিউলের মৃত্যুর খবরে রাত ২ টার পর থেকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। সড়ক অবরোধকারীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে নির্যাতনকারী পুলিশকে দ্রুত আইনের আশ্রয়ে আনার দাবি জানান। এসময় তারা পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরে ভোর চারটার দিকে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলম অবরোধকারীদের তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালে অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, মেলায় জুয়া চলছে এমন খবরে পুলিশ অভিযান চালায় এবং দুজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের থানায় আনার সময় একজন অসুস্থতা বোধ করলে চিকিৎসার জন্য সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয়।হাসপাতালের চিকিৎসক অসুস্থ ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে সে মারা যায়, সন্দেহ হলে আবারো তাকে ডাক্তার দেখানো হয় এবং চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন