ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বোরো ধানের উঠতি ফসলে কৃষকের মুখে আনন্দমাখা হাসি ম্লান হয়ে গেছে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে। মাঠের দিকে দূর থেকে তাকালে মনে হয় ধানগুলো পেকে আছে। কিন্তু না, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধানের ভেতর চাল হওয়ার পরপরই এগুলো হলুদ রঙ ধারণ করেছে। ধান, কৃধানের ভেতরে কোন দানা নেই, শুধুই চিটা। পরিশ্রমের ফসলের ক্ষেত বিনষ্ট করে দিয়েছে সর্বনাশা ব্লাস্ট রোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, আগাম ফসল উঠে যায় এই কারণে ব্রি-২৮ জাত বেশ জনপ্রিয়। এবারো ফলনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল এই জাতের ধান। আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পাকা বোরো ধান মাড়াইয়ের পর্যায়ে চলে যাবে। শেষ পর্যায়ে এসে আঘাত হানল ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ।
ইউনিয়ন ফিয়াক সেন্টার (কৃষকের তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র) বা কৃষি অফিসের পরামর্শ বা সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক কৃষক জানান, এই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কাউকেই আমরা চিনি না। এখন পর্যন্ত কেউ সরেজমিনে এসে খোজ নেয়নি। বাজারের কীটনাশক ও সারের দোকানিদের পরামর্শ নিয়ে করা হচ্ছে জমির পরিচর্যা। এরপরও হচ্ছে না কোন প্রতিকার। তবে মাঠ পর্যায় ঘুরে যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ধারা, আমতৈল, বিলডোরা, নড়াইল ইউনিয়নে এ জাতের ধান চাষ করে লোকসানে পড়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকগণ।
]কৃষি অফিস বলছে, ধানে ব্লাস্ট রোগের যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তা পরিমাণে খুব কম। এতে উৎপাদনে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। চাষে নিরুৎসাহিত করার পরও যেসব কৃষক ব্রি-২৮ অননুমোদিত জাতের ধান চাষ করেছেন সেই ক্ষেতগুলোতেই কেবল ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষিখাতে ভূমিকা রাখা হালুয়াঘাট উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৩৬, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮১, গুটি স্বর্ণা ও স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করেছেন। তবে কত হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে তা জানাতে পারেনি উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলার পূর্বধারা এলাকার কৃষক মোফাজ্জল হোসেন ও আঃ করিম সহ অনেকেই জানান, ধানের শীষে কোন ধান নেই। আছে চিটা। ধান কেটে গরু-মহিষের খাবার খড় ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না। হঠাৎ এমন ক্ষতিতে কোন ভাবেই হিসাব মেলাতে পারছিনা। একই অবস্থা পার্শ্ববতী ধুরাইল ইউনিয়নে চরগোরকপুর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলামের। তিনি জানান, প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে এ জাতের ধান আবাদ করা হয়েছিল। এবার হয়তো ফসল ঘরে তুলতে পারবো না। ফসল কাটার উপযুক্ত সময়ে এসে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার তিনি। পরিচর্যা করেও কোন লাভ হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, নিয়ম মতো ওষুধ স্প্রে করলে ব্লাস্ট রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু কৃষকরা কোনো পরামর্শ বা যোগাযোগ রাখেন না। এতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের এ জাতের ধান রোপণ করতে নিষেধ করি। তবু কৃষকেরা ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেন। এ রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করতে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর