চলতি মৌসুমে সুন্দরবনে মধু পাচ্ছেন না মৌয়ালরা। আর মধু না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বাগেরহাটের মৌয়ালদের। অনাবৃষ্টি ও সঠিক সময়ে বনের গাছ-গাছালিতে ফুল না ফোটার কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান মৌয়ালরা।
মৌয়ালরা জানান, এমন পরিস্থিতিতে লোকসানে পড়ে এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আর বনে যাবেন না মৌয়ালরা। তবে সামনে বৃষ্টিপাত হলে বনে ফুল এবং মধু পাওয়া যাবে বলে আশা করছে বনবিভাগ।
সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা মৌয়ালদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ দিনের পাস নিয়ে গত ১ এপ্রিল বনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তারা। এবার বনবিভাগের দ্বিগুণ রাজস্বসহ নৌকা ভাড়া, খাবারের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় ও সব মিলিয়ে দলের একজন সদস্যের খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু মধু না পেয়ে প্রথম চালানেই লোকসানে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনকি বনে যাওয়ার মতো হাতে টাকা না থাকায় এবছর দ্বিতীয়বার আর বনে যাবেন না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৌয়ালদের অনেক দল।
শরণখোলা উপজেলার উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের মৌয়াল ইউসুফ মুন্সী জানান, প্রথম গোনে (১৪ দিনে) তার ১০ জনের দলে মধু পেয়েছে মাত্র ১৭ কেজি। যা জনপ্রতি ভাগে পেয়েছেন এক কেজি ৭০০ গ্রাম করে। গত তিন যুগে সুন্দরবনে মধুর এমন বিপর্যয় দেখেননি তারা।
সাউথখালী ইউনিয়নের জলেরঘাট গ্রামের মৌয়াল নূর ইসলাম ফরাজী, ইব্রাহীম বেপারী, রিয়াদুল ফরাজীসহ অনেকেই জানান, আগে বনের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকা খুঁজলেই ৪ থেকে ৫টি মৌচাক পাওয়া যেতো। একেকটি মৌচাক থেকে ১০-১২ কেজি মধু পেয়েছেন তারা। কিন্তু এবার মাইলের পর মাইল হেটেও মৌচাক চোখে পড়ে না। বনে ফুলের সংখ্যাও কম দেখা গেছে। দু’একটি ছোট মৌচাক পাওয়া গেলেও তা ভেঙে দুই থেকে তিনশত গ্রাম করে মধু পাওয়া গেছে। খুড়িয়াখালী গ্রামের মধু ব্যবসায়ী মো. রাসেল আহমেদ জানান, এবার এক লাখ টাকা মৌয়ালদের দিয়েছি। যে সংবাদ পাই তাতে চালান ফিরবে কিনা সেই চিন্তায় পড়েছি।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আসাদুজ্জামান জানান, এ বছর প্রথম গোনে (১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল) শরণখোলা স্টেশন থেকে ৭৬টি দলকে মধু আহরণের পারমিট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি দল তাদের পাস জমা দিয়েছে। কিছু কিছু দল ফিরে এলেও অনেকেই বনে রয়েছেন। তার মতে গত দুই বছর সুন্দরবন অঞ্চলে এমন সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না। এ কারনে বনের গাছ গাছালিতে ফুল আসলেও তা শুকিয়ে ঝরে যায়। ফলে মৌমাছি ও কীটপতঙ্গের খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়। তাই মধু না পেয়ে মৌমাছিও আসে না। গতবছরও প্রথম দিকে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। কিন্তু শেষের দিকে ভালোই মধু পাওয়া গেছে। সামনে বৃষ্টিপাত হলে বনে ফুল এবং মধু পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, পূর্ব সুন্দরবনে এবছর ১০৫০ কুইন্টাল মধু এবং ৩৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য নিয়ে শরণখোলা, চাঁদপাই, ঢাংমারী ও জিউধরা স্টেশন থেকে ১২৭টি পাস (পারমিট) দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। প্রথম চালানে মধু কম হলেও মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কম বা বেশির হিসাব এখনই নির্ধারণ করা যাবে না।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ