দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় মাওয়া-জাজিরা প্রান্তের ফেরি চলাচল বিঘ্ন হতো। সে কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা সেতুর পিলারের সাথে ফেরির ধাক্কা লাগায় ভোগান্তি সৃষ্টি হয় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। সেই যানজট রাস্তার দুইপাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়।
পদ্মা সেতুর চালুর খবরে এরই মাঝে বন্ধ হয়েছে দৌলতদিয়া প্রান্তের কয়েক’শ দোকান। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে- এমন শঙ্কায় পদ্মা পাড়ের কয়েক হাজার কর্মজীবী মানুষ অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট ঘুরে জানা যায়, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে। তার প্রভাব পড়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে। প্রায় ১৫ দিন ফেরিঘাটে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের কোনো ভোগান্তি দেখা যায়নি। ফেরিঘাটের পুলিশ বক্স এলাকা থেকে ফোর লেন পর্যন্ত কয়েক’শ দোকান বন্ধ হয়েছে। এসব দোকানগুলোর মধ্যে চা-পান-বিস্কুটের দোকান বেশি।
দৌলতদিয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক এলাকার কেয়ামুদ্দিন মোল্লা পাড়ায় বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ করে পাওয়া যায় নান্নু নামে এক চা ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর খবরে ফেরিঘাটে যানজট নেই। এই যানজট ঘিরেই আমাদের ব্যবসা ছিল। যানজটে আটকে মানুষ চা, বিস্কুট, পান, সিগারেট খেত। গত ১০দিন হল দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান বের করতে হবে।
ফেরিঘাট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আহম্মদ খান বলেন, দৌলতদিয়া এলাকায় দুই শতাধিক খাবারের হোটেল রয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় অর্ধেক হোটেলের বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মানুষ না আসলে আমাদের হোটেল চলার কোনো সম্ভাবনা নেই।
রাজবাড়ী চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি অরূপ দত্ত হলি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতিতে সাফল্য আসবে। এই অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। গ্যাস আসবে। আমাদের দাবি দৌলতদিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন করা। এই বন্দর দিয়ে যদি নদী পথে পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয় তবে ব্যাপক সাফল্য আসবে। সেটির মূল ভিত্তি হতে পারে পদ্মা বহুমুখী সেতু।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, দৌলতদিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন শুরু হয়েছে। সেই কাজ চলমান রয়েছে। পদ্মা সেতু চালুতে এই অঞ্চলের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। তখন ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে যানবাহন পারাপার কমে আসবে। আমরা আগামী এক মাস পর্যবেক্ষণ করবো। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলবো। তবে কোনো মানুষ কর্মহীন হবেন না। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর