১৫ আগস্ট, ২০২২ ২২:২০
পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার

বাগেরহাটে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে নদীর পানি

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে নদীর পানি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় বাগেরহাট শহর, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী ও শরণখোলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

তিনটি পৌরসভাসহ জেলার ৭টি উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজার মাছের খামার ও পুকুর পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। 

মোরেলগঞ্জ বাজারসহ ফেরিঘাট থেকে পুরনো থানা ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে হু-হু করে পানি ঢুকছে। অনেক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত রয়েছে। ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে এবার তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। 

সুন্দরবনের সব থেকে উচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটিও ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীরা এখনো নিরাপদ রয়েছে। এখন পর্যটনসহ সব ধরনের বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় এতো উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পানির তোড়ে সুন্দরবনের বাঘ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ভাগ্যে কি ঘটেছে বা কেমন আছে তা নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে জানা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় গোটা সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। 

এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল ওঠায় শনিবার রাত থেকে সাগরে ফের ইলিশ আহরণ বন্ধ হয়ে গেছে। তিন নম্বর সংকেতের মধ্যে উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে গতকাল রবিবার ভোর থেকে কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের ছোট নদী-খাল ও বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহ ই আলম বাচ্চু জানান, বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে প্রতিটি পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিসহ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু ও নিম্নচাপের প্রভাবে দিনে-রাতে দুইবার করে প্লাবিত হচ্ছে মোরেলগঞ্জ পৌরশহরসহ পানগুছি নদী তীরবর্তী খাউলিয়া, বারুইখালী, হোগলাবুনিয়া, বহরবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ, বলইবুনিয়া, পঞ্চকরন, তেলিগাতী ইউনিয়নের গ্রামগুলোর কয়েক হাজার বসতবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সড়ক। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব পরিবারের অনেকেই রান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানিতে এ পর্যন্ত ১০০০টি মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার মজুমদার ও বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি এম সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, সাগরে ঝড়ো হাওয়ার কারণে টিকতে না পেরে সোমবার বিকাল পর্যন্ত কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের দুবলার চর, ছোট ভেদাখালী, বড় ভেদাখালী, অফিস কিল্লা, মাইটের খাল, কচিখালীসহ কাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে।  

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, কেন্দ্রটি গত চার দিনে ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই দিনের ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের রাস্তঘাটসহ বন্যপ্রাণী রাখার সেডেও পানি ঢুকে পড়েছে। তবে এখনো করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণী হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা নিরাপদ রয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে বাগেরহাটের সব নদ-নদীর পানি। এতে করে জেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে জেলায় পাউবোর বাঁধ স্বাভাবিক রয়েছে। 

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল জানান, গত দু'দিনের জলোচ্ছ্বাসে জোয়োরের পানিতে এ পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলার শতশত মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৎস্য খামারীদের নেট দিয়ে পুকুর ও খামার ঘিরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরোপনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করছে মৎস্য বিভাগ।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমরেশ চন্দ্র ঢালী বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোয় বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উঁচু জোয়ার হচ্ছে। নিম্নচাপের কারণে মোংলাসহ দেশের তিনটি সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর