বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির সংবাদে যমুনা নদী পাড়ের চাষি ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে প্রশাসন বলছে, নদীতে পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে এ উপজেলার যমুনা এবং বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিন যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৩.৫২ মিটার। যা গত কয়েকদিনে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে হয়েছে ১৪.৮৯ মিটার। এতে গত ৬ দিনে যমুনা নদীর পানি ১ মিটার ৩৭ সে. মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১.৮১ মিটার এবং বাঙালি নদীর পানি ১.৮৮ মিটার নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও দুঃচিন্তায় রয়েছে উপজেলার যমুনা নদী পাড়ের হাইব্রিড মরিচ চাষীরা। চাষিরা সবেমাত্র জমিতে হাইব্রিড মরিচ রোপন করেছেন। তাদের মরিচের গাছগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। গত জুলাই মাসে যমুনা নদীতে পানি বেড়ে বন্যায় উপজেলার ৭ ইউপির ৭৭ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। গত বন্যায় পাটসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা জমিতে পাট, আমন ধান, আউশ ধান, গাইঞ্জা ধানের বীজতলাসহ নানা ধরনের ফসল জমিতে আবাদ করেছেন। পুনরায় পানি বৃদ্ধিতে জমির ফসলহানি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউপির সুজাতপুর চরের হাইব্রিড মরিচ চাষী গেন্দা সরকার বলেন, প্রতিবছর প্রায় আট বিঘা জমিত মরিচের চাষ করে থাকি। গত কয়েকদিন আগে এক বিঘা জমিত হাইব্রিড মরিচ চাষ হয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে মরিচ খেত নষ্ট হয়ে যাবে। খেত নষ্ট হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে।
কাজলা কুড়িপাড়া চরের ধানচাষী বাদশা মিয়া আকন্দ বলেন, জুলাই মাসে বন্যার পর পানি নেমে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে এ বছর নদীর পানি আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এতে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষিরা আতঙ্কিত হয়ে আছে।
সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ বছর উপজেলায় স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর। যার মাত্র ৬০০ হেক্টর অর্জন হয়েছে। হাইব্রিড মরিচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০০০ হেক্টর। যার ১৬০ হেক্টর অর্জন হয়েছে। এ বছরের গত ১৭ জুন শুক্রবার বিকাল ৬ টায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। এরপর পানি বেড়ে গত ২১ জুন মঙ্গলবার যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৬৪ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। ঐ বন্যায় উপজেলার ৭৭ টি গামের ১৪ হাজার ১ শত ৮০ পরিবারের ৫৬ হাজার ৭২০ জন মানুষ, ১০ হাজার ২৫০ টি টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যায়, ১১ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দিসহ পশুখাদ্য তলিয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পানিতে আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয়েছিল ৫৫০ টি বাড়ীঘর। ডুবে গিয়েছিল উপজেলার ৬৮ টি কাঁচারাস্তা, ৩ টি পাকারাস্তা এবং ৯ টি ব্রিজ। এছাড়া ৩১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ডুবে যাওয়ার কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পেলেও আগামী ৭ দিনের মধ্যে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে এই পানি আবারো কমে যাবে। বন্যা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
বিডি প্রতিদিন/এএ