পেশাদার গাড়িচালকদের জন্য নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে এ নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলে এ ক্ষেত্রে কুষ্টিয়া জেলায় ডোপ টেস্ট চালু হয় গত ১৫ জুন থেকে। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর ডোপ টেস্ট চালু হলেও কিট সংকটের কারণে মাত্র দেড় মাসের মাথায় হঠাৎ করেই ডোপ টেস্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে প্রায় তিন হাজার পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ঝুলে রয়েছে। এদিকে ডোপ টেস্ট না হওয়ায় নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে না পাওয়ায় রাস্তায় রাস্তায় পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে চালকদের। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন টেস্ট কিট ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের তথ্য মতে, কুষ্টিয়া বিআরটিএ থেকে বিগত আগষ্ট মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ২শত ২০ জন চালকের নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের জন্য ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের দপ্তরে নামের তালিকা পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৯৬৫ জনের ডোপ টেস্টের ফলাফল পাওয়া গেছে। এদের ১৫ জনের পজিটিভ আসায় লাইসেন্স প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। এখনও ফলাফলের অপেক্ষায় আছে ২ হাজার ২৫৫ জন। এদিকে বৃহস্পতিবার (পহেলা সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষমান তালিকা প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। কবে কিট হাতে এসে পৌঁছাবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কুষ্টিয়ায় আবারো ডোপ টেস্ট জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে রাস্তায় রাস্তায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে কুষ্টিয়া অঞ্চলের ড্রাইভারদের। মামলার ভয়ে চালকদের অনেকেই আন্তঃজেলা ভাড়ায় যেতে চাচ্ছেন না। আমরা এখন ড্রাইভার সংকটে পড়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টেস্ট কিট শেষ হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দরকার ছিল। কিন্তু তারা সময় মত এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ না করায় চালকের এখন পথে পথে গাড়ি নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার স্বস্তিপুর এলাকার ট্রাক চালক রাসেল বিশ্বাস বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ডোপ টেস্টের জন্য বিআরটিতে কাগজ নিয়ে ১৫ দিন ধরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ঘুরছি। কাগজ জমা নিচ্ছে না। প্যাথলজি বিভাগ থেকে আমাকে চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলে মামলা খেয়ে জরিমানা দিয়েছি। আরেকবার ট্রাফিক সার্জেন্টকে টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি। কাজ না করলে খাবো কি।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল আলম বলেন, জুলাই মাসের ২৪ তারিখে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে টেস্ট কিট ফুরিয়ে যাওয়ার তথ্য তাদেরকে জানানো হয়। এদিকে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৫০-৬০ জন লাইসেন্স প্রত্যাশী চালককে ডোপটেস্টের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু ডোপ টেস্ট জটিলতায় লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম আটকে যাচ্ছে। ডোপ টেস্ট বন্ধ থাকায় তাদেরকে চালকদের কাছ থেকে কটু কথা শুনতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মোঃ আব্দুল মোমেন জানান, কিট ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে ডোপটেস্ট বন্ধ রয়েছে। বাজেট প্রাপ্তি সাপেক্ষ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিট কেনা হবে। তবে কবে বাজেট হবে এবং কিট কেনা সম্ভব হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনো তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কুষ্টিয়া জেলায় অন্যান্য জেলার তুলনায় নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স’র চাহিদা ও নবায়নের চাহিদা অনেক বেশি। যে কারণে মাত্র কদিনের মধ্যেই কিট ফুরিয়ে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল