কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মনিয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষিকা ও তার স্বামী প্রভাবশালী হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিসের সকলকে ম্যানেজ করে এ ছুটির আয়োজন করেছেন বলে অভিযোগ।
রীতিমত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগও বিষয়টি আড়াল করে তাকে সে সুবিধা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ইতোপূর্বেও দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন বলে। আলোচিত ওই শিক্ষিকা আলেয়া সালমা শাপলা বিগত ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মনিয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর তার ২০১৯ সালে তৃতীয় বিয়ে হলে তিনি বগুড়ায় চলে যান। পরে মহামারী করোনার প্রকোপ বাড়ার সুবাদে ছুটি পেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আর কুড়িগ্রামে আসেননি।
জানা গেছে, বিভিন্নভাবে তিনি অসুস্থ ও নানা অসুবিধার অজুহাতে ছুটি নিয়ে স্কুল আসতেন না। তিনি বগুড়াতেই অবস্থান করছিলেন। এরই মধ্যে তিনি চলতি বছর গত ১৪ মার্চ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন। কিন্তু তার সম্প্রতি কোনো সন্তান জন্ম না নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে প্রশ্নের সঞ্চার হয়। পরে বগুড়ায় খবর নিয়ে জানা যায় গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের দেওনাই গ্রামের আনিছুর রহমান পাশার স্ত্রী শারমীনের ছোট সন্তান আশফিয়াকে নিয়ে এসে তিনি তার নিজ সন্তান পরিচয় দেন।
এরপর শিক্ষা অফিস থেকে মাতৃত্বকালীন ৬ মাসের ছুটি ভোগ করতে থাকেন। পাশার স্ত্রী শারমীন জানান, আমার দুটি কন্যা সন্তানের ছোট মেয়ের নাম আশফিয়া। সে চলতি বছরের মার্চ মাসে জন্মগ্রহণ করে। তার প্রতিবেশী আলেয়া সালমা শাপলার অনুরোধে গত মার্চ মাসে কন্যা সন্তানসহ তিনি নাগেশ্বরীতে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। শিক্ষিকা শাপলা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের তাজুরপাড়া গ্রামের এএসএম ইবনে আজিজের মেয়ে তিনি। ভাইয়ের চাকরির সুবাদে তিনি কুড়িগ্রামে অবস্থান করছিলেন। এখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে তিনি ২০১২ সালে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর বদলী হন একই উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি একই ইউনিয়নের মনিয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
ওই শিক্ষিকার স্বামী শফি আহমেদ স্বপন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। তিনি বলেন, আমি শাপলাকে কুড়িগ্রাম থেকে বদলী করে নিয়ে আসব। বর্তমানে বদলী বন্ধ থাকায় অপেক্ষা করছি। বদলী কার্যক্রম চালু হলেই নিয়ে আসবো।
এসব অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষিকা আলেয়া সালমা শাপলা বলেন, আপনারা কেন প্রশ্ন করছেন আমি সবই বুঝি। কুড়িগ্রামে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, এটিও, টিও সবাইকে ম্যানেজ করে আমি ছুটিতে আছি। আমি আবারও ১৪ দিনের ছুটির আবেদন করেছি। যতদিন ট্রান্সফার না হবো ততদিন ছুটি নিয়েই যাবো।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা সুলতানা ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিয়মমাফিক ছুটিতে আছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার আবু নোমান নওশাদ আলী বলেন, বিধি অনুযায়ী শিক্ষিকার মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোবাশ্বের আলী বলেন, আমি তার বাচ্চাকে দেখেছি। প্রধান শিক্ষকের সুপারিশ থাকায় ছুটি পান তিনি। যদি অসত্য হয়ে থাকে তাহলে জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানাবো।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি শুনেছি এবং তদন্ত চলমান। সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এটিএম তৈফিকুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা করলে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল