২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২০:২৭

লাল মাটির নিচে 'ধূসর সোনা’

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

লাল মাটির নিচে 'ধূসর সোনা’

কচুর মুখি তুলতে ব্যস্ত সময় কাটছে চাষি ও শ্রমিকদের

লালমাই পাহাড়ে ও ঢালুতে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে শ্রমিকদের। পাহাড়ের লাল মাটিতে পড়ছে কোদালের কোপ। কোপে উঠে আসছে ধূসর সোনা। গরমে ঘামে কাপড় ভিজে গেলেও যেন তাদের ক্লান্তি নেই। কারণ পাইকারি বাজারে কচুর ছড়া পৌঁছে দিতে পারলে চাষির হাতে আসবে নগদ টাকা। অন্যদিকে বেশি ছড়া তুলতে পারলে আয় বাড়বে শ্রমিকদের।

এই দৃশ্য কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার শালবন বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন লালমাই পাহাড়ের মদিনানগর এলাকায়। লালমাই পাহাড়ের রাজারখলা, সিসিএন পাহাড় এলাকা, দর্জির খিল, হাতিগাড়ামুড়া ও ভাঙ্গামুড়া এলাকার ৫০ হেক্টর জমিতে কচুর মুখি চাষ হয়। এটিকে স্থানীয় ভাষায় বলে লালমাইয়ের ছড়া। এই ছড়া তোলার মৌসুমে স্থানীয় পুরুষের সাথে নারীদেরও কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মদিনানগর এলাকায় প্রায় এক হেক্টর জমিতে লালমাইয়ের ছড়ার চাষ করেছেন পাশের গন্ধামতি গ্রামের তরুণ চাষি আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার বেতন দিয়ে পরিবার চলছিল না। পাহাড়ে পরিবারের কিছু পতিত জমি ছিল। সেখানে ছড়া কচুর চাষ শুরু করেন। আট বছর ধরে কচুর ছড়ার চাষ করছেন। পাইকারি বিক্রি করেন কেজি ৪০-৪৫ টাকা। বাজারে সেটা ৫০ -৬০ টাকা কেজি ধরে খুচরা বিক্রি হয়। এবছর প্রায় এক হেক্টর জমিতে কচুর ছড়া চাষে খরচ হয় তিন লাখ টাকার মতো। নিজেদের খাবার ও স্বজনদের দেয়ার পরে আট লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। লালমাই পাহাড়ের পাশে পাহাড়তলী বাজারে এই ছড়া পাইকারি বিক্রি করেন।

পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ঠাস ঠাস শব্দ তুলে জমিতে কোদাল চালাচ্ছেন শ্রমিকরা। উঠে আসছে কচুর ছড়া। সেগুলো এক স্থানে স্তূপ করা হচ্ছে। স্তূপ থেকে হাত দিয়ে ছড়া পরিষ্কার করা হচ্ছে। প্রত্যেক শ্রমিকের ছড়া মেপে তার টাকা বুঝিয়ে দিচ্ছেন চাষি। চাষি সেই ছড়া তার বাড়িতে নেয়ার প্রস্তুতি নেন। শেষ রাতে বিক্রি করতে নিয়ে যাবেন লালমাই পাহাড়ের পাশে পাহাড়তলী বাজারে।

স্থানীয় শ্রমিক কাজল আক্তার বলেন, এক ছেলে তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে পৃথক থাকে। এখানে কোনো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নেই। কাজের সুযোগ নেই। তাই কয়েক বছর ধরে সবজির জমি ও কচুর ছড়ার জমিতে কাজ করেন। ৪০ কেজি ছড়া তুললে ৩৫০ টাকা, ৮০ কেজি তুললে ৭০০ টাকা পান। জমিতে ফলন ভালো হলে দিনে ১০০ কেজি ছড়াও তুলতে পারেন।

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, লালমাইয়ের ছড়ার সুনাম দেশজুড়ে। এর স্বাদ বেশি হওয়ায় চাহিদা বেশি। দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে অনেক খুচরা ব্যবসায়ী সমতলের ছড়ায় লালমাটি মিশিয়ে লালমাইয়ের ছড়া বলে চালিয়ে দেয়। এ বিষয়ে ক্রেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। লালমাইয়ের ছড়া ইলিশ মাছ দিয়ে রান্না করলে দারুণ স্বাদ হয়।

সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, লালমাই পাহাড়ে ৫০ হেক্টর জমিতে কচুর মুখি চাষ হয়।  প্রতি হেক্টরে ২০ টনের মতো ছড়া উৎপাদন হয়। সে হিসেবে এখানে সাড়ে চার কোটি টাকার ছড়া প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হচ্ছে। এটিকে স্থানীয় ভাষায় বলে লালমাইয়ের কচুর ছড়া।

তিনি আরও বলেন, এই ফসলে সেচ প্রয়োজন হয় না। সার ও কীটনাশক কম লাগে। এতে কৃষক ভালো লাভ পায়। কখন কি পরিমাণ সার দিলে ফসল ভালো হবে এবং কখন কীটনাশক দিতে হবে এসব বিষয়ে কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে থাকে। এখানে বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে পাঁচ শতাধিক পরিবার লালমাইয়ের কচুর ছড়া চাষের সাথে জড়িত। এই কচু চাষের সাথে জড়িত আছেন কয়েক হাজার শ্রমিকও।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর