খুলনার আলোচিত মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের মধ্যে চারজনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মাহমুদা বেগম।
জামিন পাওয়া চারজন হলেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও তার ভাই মো. মহিউদ্দিন এবং মহেশ্বরপাশা এলাকার রফিকুল ইসলাম ও তার ভাই মো. জুয়েল।খুলনা দৌলতপুর খানাবাড়ী এলাকা নিজ বাসা গত ২৭ আগস্ট রাত ১১টার পর নিখোঁজ হন রহিমা বেগম (৫২)। এ সময় তিনি প্রথম স্বামীর বাসভবনে দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন।
নিখোঁজ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রহিমা বেগমের পুত্র মিরাজ আল সাদী দৌলতপুর থানায় জিডি দাখিল করেন। এই জিডি দাখিলের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিখোঁজের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কন্যা আদুরী আক্তার দৌলতপুর থানায় নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে রহিমা বেগমের জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকার কথা উল্লেখ করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এই মামলার পর নিখোঁজ রহিমা বেগমের অপর কন্যা মরিয়ম মান্নান খুলনা ও ঢাকায় একাধিক মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। তার মাকে অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে তার কান্নাজড়িত বক্তব্য গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হলে দেশবাসীর সহানুভূতি লাভ করে। মায়ের সন্ধানের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও দেখা করেন মরিয়াম মান্নান।
গত ২২ সেপ্টেম্বর মরিয়াম মান্নান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে তার মায়ের লাশ পেয়েছেন বলে দাবি করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানায় গিয়ে ৩০ বছর বয়স্ক অজ্ঞাত নারীর লাশের ছবি দেখে নিজের মায়ের লাশ বলে দাবি করেন। চূড়ান্তভাবে লাশ শনাক্তের জন্য ডিএনএ টেস্ট করার আবেদন করেন।
এদিকে, নিখোঁজ রহিমা বেগম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সৈয়দপুর গ্রামে জনৈক কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে নিজের জন্ম নিবন্ধন করার আবেদন করেন। গণমাধ্যমে রহিমা বেগমের ছবি দেখে চেয়ারম্যানের সন্দেহ হয়। তিনি তখন খুলনা পুলিশকে খবর দেন।
উদ্ধার হওয়ার পর মেয়েদের পরামর্শে রহিমা বেগম আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তাকে অপহরণের দাবি করেন।
তিনি বলেন, আসামিরা তার মুখে রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে অপহরণকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে ছেড়ে দে। পরে বান্দরবান হতে ট্রেনে করে ফরিদপুর আসেন। পিবিআই পরবর্তিতে রহিমা বেগমের দেওয়া জবানবন্দি সঠিক নয় বলে জানান। কারণ, বান্দরবানে কোনো ট্রেন লাইন নেই। আর উদ্ধারকালে রহিমা বেগমের কাছে একটি ব্যাগ, তার অতিরিক্ত কাপড়, ওষুধসহ বিভিন্ন নিত্যব্যবহার্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পাওয়া গেছে। অপরহণ হলে এগুলো সাথে থাকার কথা নয়। পরবর্তিতে মরিয়ম মান্নান নিজের মা রহিমা বেগমকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন।
এই ঘটনায় এখনও রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার এবং প্রথম আটক হওয়া হেলাল শরীফ এখনও জেলে রয়েছেন। আজ তাদের জামিনের শুনানি হয়নি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন