চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের দোকানে পত্রিকার কাগজ, পরিত্যক্ত পোস্টার, বইয়ের পৃষ্ঠার কিংবা খাতার পাতার প্যাকেট বা ঠোঙায় শুকনো জাতীয় খাবার চল রয়েছে। এসব প্যাকেটে মোড়ানো ঝালমুড়ি, আচার, সিঙ্গারা, চপ, রুটি, লুচি, পরাটা ভোক্তারা নিয়ে থাকেন। কিন্তু অনেকেরই এটা জানা নেই যে, এটা মারাত্মক ক্ষতিকারক। খবরের কাগজসহ পোস্টারের ছাপার জন্য ব্যবহৃত কালি খাবারের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় শরীরে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
সুশীল সমাজ বলছেন, সাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারাভিযান চালানো দরকার। বিকল্প হিসাবে পরিবেশ সম্মত কাগজের প্যাকেট বা ঠোঙা তৈরি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, খাবার থেকে শুরু করে শুকনা খাদ্যদ্রব্যের নানা উপকরণের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে পত্রিকার কাগজ, খাতার পাতা, বইয়ের পৃষ্ঠা ও পরিত্যক্ত পোস্টারের ঠোঙা। খবরের কাগজসহ অন্যান্য কাগজ ও পোস্টার দিনের পর দিন স্যাত স্যাত অবস্থায় পড়ে থাকায় বিভিন্ন জীবাণু তৈরী হয়। হোটেল ও রেস্তোরাসহ বিভিন্ন দোকানে খবরের কাগজ ও পরিত্যক্ত পোস্টার ঠোঙায় পরাটা, লুচি থেকে শুরু করে শুকনো জাতীয় খাবার ও মুড়ি-তেলেভাজা, মিষ্টি অনেক কিছুই দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। এসব কাগজের ঠোঙায় খাবার পরিবেশন খাদ্যসুরক্ষার বিচারে খুবই বিপজ্জনক। এমনকি, সেই ঠোঙায় আনা কাঁচা খাবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না করে ফেলার পরও ঝুঁকি কমে না। কেননা, খবরের কাগজ ও পরিত্যক্ত পোস্টারের কালির মধ্যে থাকা নানা রাসায়নিকের হরেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ সবেরই মধ্যে থাকে বিভিন্ন অসুখের জন্ম দিতে সক্ষম ভারী ধাতু, খনিজ তেল এবং থ্যালেট জাতীয় চরম ক্ষতিকারক রাসায়নিক খবরের কাগজের ঠোঙার মাধ্যমে সাধারণ সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও রয়েছে। কালি থেকে বদহজমের পাশাপাশি খাদ্যনালীর নানা অসুখও হতে পারে শরীরের নানা অঙ্গে। এমন ঠোঙা ব্যবহারকারীদের মধ্যে শিশু-কিশোর-বয়স্কদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তাদেরই যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় কম।
শহিদুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, হোটেলে পরাটা, লুচি, সিঙ্গারাসহ শুকনো জাতীয় খাবার কিনতে গেলে তারা পত্রিকার কাগজ, খাতার পাতা, বইয়ের পৃষ্ঠা ও পরিত্যক্ত পোস্টারের ঠোঙায় এসব খাবার দিয়ে থাকেন। তাদেরকে বলতে গেলে তারা এর সদুত্তোর দেন না। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসব তৈরীকৃত ঠোঙা ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা দরকার। আরেক ক্রেতা নাসির হোসেন বলেন, পরিত্যক্ত তৈরীকৃত পোস্টারের ঠোঙায় লুচি আর পরাটা দেয়, তা ব্যবহৃত কালি খাবারের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় একেবারে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে ওঠে। বিকল্প হিসেবে পরিবেশ সম্মত কাগজের প্যাকেট তৈরী করে তা বাজারে সরবরাহ করা দরকার। তাই প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুুদুর রশিদ জানান, পত্রিকার কাগজ, বইখাতার পাতা ও পরিত্যক্ত পোস্টার দিয়ে ঠোঙা বা প্যাকেট তৈরী করে হোটেল-রেস্তোরাসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে সরবরাহ করে থাকে। খাদ্যদ্রব্য প্যাকেটজাত করে তারা ক্রেতাদের দিচ্ছে। ছাপার জন্য ব্যবহৃত কাগজে যে কালি ব্যবহার করা হয়, সেই কালিতে কার্বন ও শীসাসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য থাকে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে জীবানুমুক্ত এবং বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরী কাগজের প্যাকেট ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী ভোক্তাদের মাঝে দিতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ