ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলের দিকে ধেয়ে আসায় বাগেরহাটে বেড়েই চলেছে আতঙ্ক। বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনা খাবার। রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ ৫ হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাত থেকে বাগেরহাটে অবিরাম বৃষ্টির পাশাপাশি সকাল থেকে বইছে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া।
বাগেরহাটের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি বেড়ে জেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মোংলা বন্দর, মোংলা নৌঘাটি, কোস্টগার্ড, সুন্দরবন বিভাগ, রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে কন্টোল রুম খুলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৬টি মেডিকেল টিম। লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। মোংলা বন্দরে এ্যালার্ড থ্রি জারি করে পণ্য ওঠা নামার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। মোংলা বন্দরের চ্যানেল ফাকা করে ফেলা হয়েছে। বন্দরে অবস্থানরত ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ জেটি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সুন্দরবনের কর্মকর্তা-বনরক্ষীদের ছুটি। সুন্দরবন থেকে সব দেশী-বিদেশী পর্যপকটের নিরাপদে লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। দুর্বল অবকাঠামো থাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সুন্দরবনের ৩টি বন অফিস। বাগেরহাটের উপকূল জুড়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় সর্ব্বেচ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনা খাবার। রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ ৫ হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। মোংলা বন্দর, মোংলা নৌঘাটি, কোস্টগার্ড, সুন্দরবন বিভাগ, রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে কন্টোল রুম খুলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৬টি মেডিকেল টিম। লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, সোমবার সকালে মোংলা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। এই অবস্থায় মোংলা বন্দরে এ্যালার্ড থ্রি জারি করে পণ্য ওঠা নামার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরের জেটি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার কারণে একটি কার-ক্যারিয়ারসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজ মোংলা বন্দরে ঢুকতে পারেনি। একইভাবে পণ্য খালাস শেষ হওয়ার পরও তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি। বন্দর চ্যানেল নিরাপদ রাখতে লাইটার জাহাজগুলোকে পশুর চ্যানেল ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে নিদের্শ দিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসোন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ধেয়ে আশায় সোমবার সকালের মধ্যেই ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের দেশী-বিদেশী সব পর্যটকদের নিরাপদে লোকালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সুন্দরবনের কর্মকর্তা-বনরক্ষীদের ছুটি। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সর্তকতা। দুর্বল অবকাঠামো থাকায় সুন্দরবনের ৩টি বন অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাম্বুলবুনিয়া, চরখালী ও শ্যালার এই ৩টি বন্ধ করে কর্মকর্তা-বনরক্ষীদের পার্শ্ববর্তী অফিসগুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ইতিমধ্যেই বাগেরহাটের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে সাত ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবার খবর পাওয়া গেছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এখন সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে মহাবিপদ সংকেত জারি করা হতে পারে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টেবার) ভোরের দিকে সিত্রাং বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। ওই সময়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন