বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা নিয়ে পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। বুধবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তারা। প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবস্থান করছে। প্রায় তিনদিন পেরিয়ে গেলেও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের তালা খোলা হয়নি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে এখন পর্যন্ত তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়।
জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্র থেকে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর চলতি বছরের ৭ নভেম্বর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরে জেলা কমিটি গঠন এবং অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন ওই কমিটিতে সজীব সাহা সভাপতি এবং আল-মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়।
ঘোষিত ৩০ সদস্যের ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ১৭ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৫ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ওই কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তারা ওইদিন রাত সাড়ে ৯টায় বগুড়া শহরের টেম্পল রোডে আওয়ামী কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যালয়ের প্রবেশ পথের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এরপর তারা তালাবদ্ধ দলীয় কার্যালয়ের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বগুড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দাবিদার অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে এমন কমিটি করা হয়েছে, যার সঙ্গে বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা কমিটিতে রয়েছেন তাদের অনেকেই ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে কখনো দেখা যায়নি। বিক্ষোভকারীরা জেলা ছাত্রলীগের গঠিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা রকম শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ছামিয়ানা টানিয়ে ছাত্রলীগের একাংশ নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যরাত অবধি।
নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া মুকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রম দেওয়ার পরেও যখন আমার পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করা হলো না, তখন মনে হয়েছে কমিটিতে না থাকাই ভাল। নেতাকর্মীরা ঘোষিত কমিটি বাতিল দাবি করে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে।
নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি ও পদবঞ্চিত নেতা তৌহিদুর রহমান জানান, আমারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছি। কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধকর্মীরা তালা দিয়েছেন। তাদের সবার দাবি যোগ্য ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচিত করা হোক।
নবগঠিত কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পদবঞ্চিত নেতা মাহাফুজার রহমান জানান, একটি অযোগ্য কমিটি দেওয়া হয়েছে। জেলার ত্যাগী ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। অযোগ্য এই কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি সজীব সাহা জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যাচাইবাছাই করে নেতা মনোনীত করেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে নেতা হওয়ার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন ৫৭ জন। যারা কমিটি গঠনের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, তারাও দায়িত্বশীল পদ পেয়েছেন। তাদের এই আচরণ শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমারা চেষ্টা করছি তাদের সাথে কথা বলে সমাধান করার। এছাড়াও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের বিষয়টি জেলার সভাপতি ও সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতারা আছেন, তারা দেখছেন।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল জানান, দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। দায়িত্বশীল নেতারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই