থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা সবুজ ও হলুদ রঙের কমলা। রসালো কমলার ভারে প্রতিটি গাছ নুয়ে পড়ছে। কোনো কোনো গাছে বাঁশের লাঠির সাহায্যে ঢোকা দিয়ে রাখা হয়েছে। বাতাসে পাকা কমলার সুমিষ্ট গন্ধ পুরো বাগানে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনি এক কমলার বাগানের দেখা মিলবে নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাটের আগ্রাদিগুন ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামে।
বাগানের মালিক সাইদুল ইসলাম পরীক্ষামূলকভাবে দার্জিলিং জাতের এই কমলা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। চোখ জুড়ানো হলুদ কমলার সৌন্দর্যের সমারোহ দেখতে এসে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে এসব কমলা বাজারজাত শুরু হওয়ায় বেশ লাভবানের প্রত্যাশা তার।
সাইদুল ইসলাম ধামইরহাটের আগ্রাদিগুন ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করার চিন্তা করেন। এই ভাবনা থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষামূলক নীলফামারী থেকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা কিনে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন।
এরপর এই প্রথম কমলা গাছে কমলা ধরেছে। প্রথমবারেই ফলন খুব ভালো হয়েছে। বর্তমানে ১৩৪টি কমলার গাছ আছে। প্রতিটি গাছ থেকে সর্বনিম্ন ২০ কেজি সর্বোচ্চ ৫০ কেজি করে কমলা পাওয়া যাবে। বাজারে কমলার দামও ভালো। প্রথমবারেই দুই থেকে তিন লাখ টাকার কমলা বিক্রি করবেন।
তিনি বলেন, প্রথমে অনেকেই ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু হাল ছাড়িনি। এলাকার আগে কেউ কল্পনা করেনি এখানে কমলার চাষ হবে। এখন অনেকেই আমার এই কমলার বাগান দেখতে এসে কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং চারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
কমলার ফলন ভালো হওয়ায় আরও বড় পরিসরে বাগান করার চিন্তা তার। নিজেই চারা তৈরি করছেন এবং যারা চারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন তাদেরকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলছেন।
কমলার বাগান দেখতে আসা স্থানীয় রাকিবুল হোসেন বলেন, সাইদুল ভাইয়ের বাগানে কমলা চাষের বিষয়টি বেশ কিছুদিন থেকে শুনছিলাম। মূলত দেখার জন্য এসেছি। ভালো লেগেছে। আমাদের এলাকায় এতো সুন্দর কমলা হবে, কল্পনার বাইরে।
মাকসুদুল হাসান নামে আরেকজন বলেন, এ এলাকায় কমলার এতো ফলন হবে জানা ছিল না। এর আগে কখনো দেখা হয়নি। এখানে এসে নিজেও কমলা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ হলাম।কৃষিবিভাগ থেকে সহযোগিতা পেলে আমিও এ ধরনের কমলার চাষ করব।
ধামইরহাট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানান, ২০২০-২১ অর্থ বছরে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারিত ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ফল বাগান প্রদর্শনীর জমি সাইদুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে জমিগুলো কমলা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। কমলা চাষের জন্য যে ধরনের মাটি বৈশিষ্ট্য থাকার দরকার তা এ অঞ্চলে রয়েছে। তার বাগানের কমলা গাছের বয়স ২ বছর। এবারই প্রথম ফলন এসেছে। আশা করছি আগামী বছর এই ফলন অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল