পটুয়াখালীর গলাচিপায় চলতি মৌসুমে জমে উঠেছে ধান কেনা-বেঁচার হাঁট। তবে উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ধান বিক্রি করতে এসে আড়তদার ও ফড়িয়া চক্রের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় বাজারে আড়তদার ও ফড়িয়া চক্র সংঘবদ্ধভাবে ৪০ কেজিতে এক মণের পরিবর্তে ৪৮ কেজি মণ নির্ধারণ করেছে। এতে প্রতি মণে ৮ কেজি করে ধান যার বাজার মূল্য ১৫০-২৫০ টাকা করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দরিদ্র কৃষকেরা।
দীর্ঘদিন ধরে ওজনে কারচুপি চললেও উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে নিরবে মেনে নিচ্ছেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ধানের বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার ধান ক্রয়ে ৮০-৯০ জন আড়তদার এবং কয়েকশ ফড়িয়া রয়েছে। তারা মৌসুমভিত্তিক ধান, ডাল, বাদাম, মরিচসহ অন্যান্য ভুষামাল কেনেন। আড়তদার মালিক সমিতির অধীনে তাদের একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে। বিভিন্ন ফসল মৌসুমে এই চক্র নিজেদের ইচ্ছামতো উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ নির্ধারণ করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক আলী আকবর জানান, চলতি বোরো মৌসুমে বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান ১০০০ থেকে ১০৪০ টাকা থাকলেও গলাচিপায় ধানের বাজারের আড়তদারেরা ৪৮ কেজিতে এক মণ নির্ধারণ করে তা ১০০০ টাকায় কিনছেন। এতে মণপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকা করে ঠকছি। আপত্তি জানালে ফড়িয়া এবং আড়তদারেরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছেন না।
গোলখালী ইউনিয়নের সুহরি গ্রামের কৃষক মো. খোকন জানান, গলাচিপা বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে দেখেন, ৪০ কেজির স্থলে ৪৮ কেজিতে মণ হিসাব করা হচ্ছে। তিনি প্রতিবাদ জানালে আড়তদার তার ধান কিনতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তিনি অন্য আড়তে গিয়ে একই নিয়মের কথা জানতে পারেন। ধান ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবহন খরচের কথা চিন্তা করে নিরুপায় হয়ে তিনি ওই নিয়মেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন।
গলাচিপা আড়তদার সমিতির সভাপতি তাপস দত্ত ৪৮ কেজিতে মণ হিসাব করার কথা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় মাপে আমরা ৪৮ কেজিতে মণ হিসাব করি। এজন্য অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে ধানের মূল্যও বেশি। এতে কৃষকদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এদিকে গলাচিপার বিভিন্ন ধানের বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক এই পরিমাপের কথা জেনে বিক্রি করতে আনা ধান বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে আড়তদার ও ফড়িয়াদের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন।
বিষয়টি অবহিত করা হলে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ৪০ কেজির পরিবর্তে কেউ যদি কৃষকদের কাছ থেকে ওজনে ৪৮ কেজি নেয় সেটা অন্যায়। বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল