বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে অপহৃত ১৫ জেলে বনদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার ভোররাতে পৃথক তিনটি জেলে নৌকায় করে তিনজন শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর ও চারজন সোনাতলা গ্রামে এবং আটজন মোংলার চাদপাঁই এসে পৌঁছায়।
এরপর উদ্ধার অভিযানে থাকা শরণখোলা ও মোংলা থানা পুলিশ এসব জেলেদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মুক্তি পাওয়া জেলেদের মধ্যে আহত তিনজনকে পুলিশ শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। মুক্তিপণ দিতে না পারায় বনদস্যুদের মারপিটে এই ৩ জেলেরা আহত হয়েছে।
তারা হলেন-বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা কাসিমপুর গ্রামের সোহেল মল্লিক (২৮), মোংলা উপজেলার বাজিকরখন্ডের আসাদুল শেখ (৩৫) ও রামপাল উপজেলার বেতকাঠা গ্রামের হানিফ হাওলাদার (৪৫)। এছাড়া শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের চারজন জেলের প্রত্যেকে ১০ হাজার করে টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া এসব জেলেরা হচ্ছেন-সালাম হাওলাদার (৬৫), ইমাম খান (২৫), সোলেমান হাওলাদার (৩০) ও ইউসুফ হাওলাদার (৩৫)।
অপরদিকে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চাঁদপাই এলাকায় ফিরে আসা জেলেদের মোংলা পুলিশ উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। এই ৮ জেলেরা হচ্ছেন-খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বুঝবুনিয়া গ্রামের আকরাম শেখ (৪২), রফিকুল খান (৩৫), রূপসা উপজেলার আলি শিকদার (৪৮), বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার দক্ষিণ হলদিবুনিয়া গ্রামের মিলন শেখ (২৩), আনিস শেখ (২২), বৈদ্যমারী গ্রামের শুকুর আলী ব্যাপারী (৩০), মনির ব্যাপারী (৩৫) ও রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের বকতিয়ার ব্যাপারী (৩৫)।
বনদস্যুদের থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসা জেলেরা জানায়, মঙ্গলবার রাতে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হরিণটানা এলাকার একটি খালে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে তারা সারারাত নৌকা বেয়ে বুধবার ভোরে লোকালয়ে এসে পৌঁছান। নয়ন বাহিনী নাম দিয়ে সাতজনের নতুন এই ডাকাত দলের কাছে দুইটি পাইপগান ও বেশ কয়েকটি দা রয়েছে। ডাকাত দলের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে এখনো একটি ট্রলারসহ কয়েক জেলে জিম্মি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তি পাওয়া জেলেরা।
এদিকে বনদস্যুদের কবল থেকে জেলে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে বুধবার দুপুরে শরণখোলায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক। পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, সুন্দরবনে জেলে অপহরণের খবর জানার সাথে সাথে মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়। উদ্ধারকৃত জেলেদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে বনদস্যুদের গ্রেফতার করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সুন্দরবনকে ডাকাতমুক্ত রাখতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে নতুন বনদস্যু বাহিনী সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হরমাল খাল ও বেরির খালে কাঁকড়া শিকার করার সময় ১২ জেলেকে অপহরণ করেন। এরপর গত শনিবার রাতে ৩ জেলেকে অপহরণ করা হয়। পরে তাদের মুক্তিপণের দাবিতে বনদস্যুরা তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই
