বগুড়া জেলায় এবার সরিষার আবাদে বেশি ঝুঁকে পড়েছে কৃষকরা। সয়াবিনের তেলের দাম বাড়ার কারণে এবছর আলুর চাষ কমিয়ে সরিষার চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৬৯০ হেক্টর। জাতীয়ভাবে চাহিদার অতিরিক্ত আলু চাষ হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। ন্যায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষে আগ্রহী করা হয়েছে কৃষকদের। এতে কৃষকরা পাবে আলুর ন্যায্য মূল্য। সরিষা আবাদে কৃষকরা ঝুঁকলে সয়াবিন তেলের দামও নিয়ন্ত্রনে থাকবে। এবার বগুড়ার মাঠে মাঠে অধিক পরিমান সরিষার আবাদ শোভাপাচ্ছে। সরিষার ফসল ভালো হয়েছে। দামও ভালো বাজারে। আমণ ধান কাটার পর সরিষা লাগিয়েছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় কৃষকরা সরিষার কালো দানাকে কালো মানিক বলেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আর এর মাঝে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
শিশির ভেজা শীতের সকালে সোনা ঝরা রোদের সোনালী আভায় সবুজ সরিষা পাতার মাঝে থোকা থোকা হলুদ ফুলে এক স্বপ্নীল মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এর মাঝে কিছু কিছু এলাকায় গুণ গুণিয়ে গান গেয়ে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌমাছিরা। আবার সূর্যাস্তের মোহময় গোধুলি বেলায় মোনোলোভা বর্ণিল সাজ ধীরে ধীরে আধারে মিলিয়ে যাচ্ছে। ঝিমিয়ে পড়ছে মৌমাছির মধুময় গানের আবেশ। কিন্তু পরদিনে নতুন সূর্য বয়ে আনছে আবার সেই মনোলোভা দৃশ্য। এমন অনাবিল পরিবেশে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের জন্য মৌচাষিরা বক্স সাজিয়ে রাখে জমির পাশে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শিবগঞ্জ, ধুনট, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, কাহালু, সোনাতলা, শেরপুর, দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলার বিস্তিন্ন এলকা জুড়ে মাঠের পর মাঠ চাষীরা ব্যাপক হারে আবাদ করেছেন সরিষার। রবি মৌসুমে আলুর বদলে উন্নত মানের সরিষার বীজ বপন করেছেন। বপন থেকে মাত্র ৭৫ দিনের এ ফসলটিতে কোন প্রকার সেচ দিতে হয় না। বপনের সময় মাটির নিচে সামন্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দেওয়ার পরেই ভালো ফলন পেয়ে থাকেন চাষীরা। এরই মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় জমি থেকে সরিষা তোলা শুরু হয়েছে। তাতে বিঘায় চাষীরা ফলন পাচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ করে। আবহাওয়া ভালো থাকায় আশাজনক ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো। নতুন সরিষা প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৯শ থেকে শুরু হয়ে ২১শ টাকা।
শিবগঞ্জ উপজেলার সরিষা চাষী মাজেদুর রহমান জানান, আমি আমন ধান কাটার পর ৫ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা বপন করেছি। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পরামর্শক্রমে এ ফসলের ভালো ফলন আশা করছি। এ বছর আলুর আবাদ কমিয়ে সরিষার চাষ বেশি করেছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর এলাকায় সরিষার আবাদের পরিমান বেড়েছে। সরিষার আবাদে তিন ধরনের লাভ রয়েছে। একদিকে পাতা ও হলুদ ফুল মাটিতে পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ও সরিষার ফুলের পাপড়ি থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে এছারাও অল্পপরিশ্রম, খরচ কম ফসলটি ঘরে তুলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, জাতীয়ভাবে চাহিদার অতিরিক্ত আলু চাষ হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। ন্যায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে বগুড়ায় ৫ হাজার হেক্টর আলুর আবাদ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষে আগ্রহী করা হয়েছে কৃষকদের। এতে কৃষকরা পাবে আলুর ন্যায্য মূল্য। সরিষা আবাদে কৃষকরা ঝুঁকলে সয়াবিন তেলের দামও নিয়ন্ত্রনে থাকবে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমন ধান কর্তন করে ভালোভাবে সরিষার আবাদ করা যায় তা অনেক কৃষকই জানেন না। তবে আমরা এই রবি ফসলটি বাড়াতে এ বছর প্রণোদনার সার, বীজ দিয়েছি। এ বছর চাষ বেড়েছে, আগামীতে আরো বেড়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে বগুড়ার কৃষকরা ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম