‘মিছা কতা কয়ে লাব নাই তোমাকে কাছে। ৩৫ টাকায় কিনা এ্যানা লাভ না হলে ক্যাংকা করে চলমু’, এভাবেই এক ক্রেতার সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন পুষ্প তরনী। তিনি দক্ষ ব্যবসায়ীর মতো নওগাঁর মহাদেবপুরে বাঁশের তৈরি শিল্পের ব্যবসা করছেন। স্বামী উজ্জ্বল তরনীকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি তিনি নিজেই এখন ব্যবসায়ী। তার দোকানে সাজানো আছে বাঁশ দিয়ে হাতের তৈরি বিভিন্ন রংয়ের কুলা, চালন, ডালি, হাতপাখা ও ঝাড়ুসহ অনেক কিছু। উপজেলার সারপট্টি এলাকায় হাটে বসে এই শিল্পের ব্যবসায়ীরা।
পুষ্প তরনী বলেন, আমরা থাকি উপজেলার কালিতলা মন্দিরের কাছে সুলতানপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ঘরে। আমরা স্বামী-স্ত্রী ব্যবসা করছি। কিছু জিনিস আমরা কিনে নিয়ে আসি। আর কিছু হাতের তৈরি। তার দোকানের রঙিন গোমাই বিক্রি হয় ২০ টাকা করে। হাঁস-মুরগি ঢাকা টোপা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে। এছাড়া বিভিন্ন দামের বিভিন্ন শিল্প আছে তাদের দোকানে।
তিনি আরও বলেন, ডালি, হাতপাখা, চালন ও কুলাসহ অনেক কিছু আমরা তৈরি করি। দিনে মাঝারি ডালি ৬-৭টা, কুলা ২০টি তৈরি করা যাবে। কুলার দাম ৫০-৭০ টাকা। সারাবছর এই ব্যবসা চলে। সপ্তাহে শনি ও বুধবার হাট হলেও আমরা প্রতিদিন এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করি। এছাড়া বাড়ি থেকেও অনেকে নিয়ে যায়। প্রকারভেদে এবং মান অনুযায়ী ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত ঝাড়ু বিক্রি হয়। ৪ মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আরেক মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। অন্য মেয়েরা পড়াশোনা করছে।
অপরদিকে উপজেলার শিবগঞ্জ সুলতানপুরের ৬৫-৬৮ বছরের ব্যবসায়ী ওসমান। তিনি প্রায় ৪৫ বছর ধরে এই শিল্পের ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসা করেই চালিয়ে যাচ্ছেন সংসারের খরচ। তিনি সপ্তাহে দুইদিন শনি ও বুধবার হাটে আসেন।
তিনি বলেন, আগের মতো আর লাভ হয় না। কারণ এখন বাঁশ ও নারিকেলের খিলনির দাম বেশি। একটা বাঁশ থেকে ভালো মানের ঝাড়ু হয় দুটো। বিক্রি ১০০-১৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কম মানের পাঁচটা এবং মাঝারি ও ছোট আরও বেশ কিছু ঝাড়ু তৈরি করা যায়। সেগুলো ৪০-৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর নারিকেলের খিলনি ৮০ টাকা কেজি। নারিকেলের ঝাড়ু প্রকারভেদে ৬০-১২০ বিক্রি হয়।
স্থানীয় তুহিন, রবিউল নামে দুই ক্রেতা বলেন, যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই আমরাও কিনি এই সকল হারিয়ে যাওয়া বাঁশের তৈরি শিল্প। বাঁশের তৈরি কিছু শিল্প আছে যা সাজসজ্জার কাজে লাগে। তাই এই শিল্পকে ধরে রাখা উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান বলেন, তারা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে, এটা অবশ্যই সবার জন্য একটা অনুপ্রেরণামূলক কাজ। আবহমানকাল ধরে চলমান ব্যবহার্য শিল্পকে তারা ধারণ করছে। এটা আগে ছিল নিত্য প্রয়োজনীয়। তবে এখন এই শিল্পগুলো অনেক জায়গায় সৌখিন হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তিনি বলেন, তারা যদি কোনো সহযোগিতার জন্য আসে, আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
বিডি প্রতিদিন/এমআই