৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২০:৪২

মই টেনে জীবিকার চাকা ঘোরাচ্ছেন মনোয়ারা

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

মই টেনে জীবিকার চাকা ঘোরাচ্ছেন মনোয়ারা

ফসলি জমিতে মই টানছেন কৃষাণী মনোয়ারা

বোরো আবাদে ধার করা মই দিয়ে ক্ষেত তৈরি করছেন এক হতদরিদ্র নারী। ফসলি ক্ষেত উঁচু নিচু সমান্তরাল করতে মইয়ের ওপর ভর করে বসে থাকেন পাঁচ বছরের ছোট শিশু। সোমবার ফসলের মাঠে এমন দৃশ্যের দেখা মিলল। হতদরিদ্র ওই নারীর নাম মনোয়ারা বেগম (৫০)। তিনি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ভাট্রা নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

ওই নারীর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩ সন্তানের জননী দরিদ্র কৃষক আবুল কাশেমের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। সন্তানরা বিয়ে করে সবাই আলাদা সংসার করছেন। স্বামীর ভিটেমাটি ছাড়া নেই কোনো ফসলি জমি। টানাপোড়েন আর অভাবের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে বাড়তি রোজগারের টাকা দিয়ে বন্ধকী পন্থায় ১৫ শতাংশ জমি সংগ্রহ করেন। গেল দুই বৎসর ধরে ফসলের মাঠে ঘাম ঝরিয়ে চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। চাষ করার জন্য নেই তার কৃষি যন্ত্রপাতি বা হালের গরু। ফলে ট্রাক্টর (কলের নাঙ্গল) দিয়ে চাষ করেছিলেন।

কিন্তু টাকার অভাবে কয়েকদিন ধরে ক্ষেতে মই দিতে পারছিলেন না। পরে প্রতিবেশী এক কৃষকের সহায়তায় মই সংগ্রহ কর অনেকটাই নিরুপায় হয়ে জোয়াল টানছেন মনোয়ারা বেগম। তার কাজে সহযোগিতা করছেন তার নাতি আ. রহমান।

মনোয়ারা বেগম জানান, স্বামী ঢাকার একটি কারখানায় চাকরি করেন। ঠিকভাবে খোঁজখবর রাখেন না। এছাড়াও সংসারে নেই কোনো উপার্জনের লোক। তাই কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য পরিবারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কারও কাছে টাকা ধার চেয়ে সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে অনেক কথা শুনতে হয়। তাই দু’মুঠো ভাতের জন্য বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে।

প্রতিবেশী শামীম হোসেন বলেন, রোদ বৃষ্টি উপক্ষো করে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে ধান চাষ করে যাচ্ছেন মনোয়ারা বেগম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হালচাষের কোনো যোগান না থাকায় নিজেই ক্ষেতে মই টানছেন। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেলে হয়তো একটু কষ্ট কম হতো।

প্রবীণ কৃষক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষক দিবসের উদ্যোক্তা আজগর আলী রূপক বলেন, কৃষিতে চাষাবাদের মাধ্যমে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন তিনি। তার এই সাহসিকতায় প্রবীণ কৃষক কল্যাণ ফাউন্ডেশন সর্বদায় পাশে থাকবে।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, অভাবের তাড়নায় হাল চাষ করা দুঃখজনক। তবে ওই কৃষাণী তার সমস্যার কথা আমাদের জানালে আমরা সরকারি নিয়ম মেনে তাকে সহযোগিতা করব।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর