২ এপ্রিল, ২০২৩ ১৮:২১

কোটি টাকার স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছেন তারা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

কোটি টাকার স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছেন তারা

কোটি টাকার স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছেন তারা

এক সময় সিনেমা হলের মাইকিং করতেন সৈয়ব আলী। পরে খাবার হোটেলে ম্যানেজারের কাজ শুরু করেন। তখন ইমরান, কালাম, মধু খাঁ, মাজেদুল খাঁ নামে কয়েকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, কীভাবে প্রতারণা করে স্বর্ণ হাতিয়ে নিতে হয়। এরপর স্ত্রী, ভাই ও তার ছেলেকে প্রশিক্ষিত করে তাদের নিয়ে সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলে নামেন প্রতারণার ধান্দায়।

মাত্র এক বছরের মধ্যে চক্রটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নরসিংদী, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় জুয়েলারি দোকানে প্রতারণা করেছে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই সৈয়ব আলীর গ্যাং হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকার স্বর্ণালংকার।

তবে সম্প্রতি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এমন একটি প্রতারণার কাজ করার পর ওই স্বর্ণের দোকানির অভিযোগ তদন্ত  করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বেরিয়ে এসেছে তাদের এসব অজানা তথ্য। এরপর গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মাদ ইমদাদ হুসাইন।

তিনি জানান, এ চক্রের ৪ সদস্যক গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন-গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের বড় দাউদপুরের সৈয়ব আলী (৪৭), তার স্ত্রী নাজমিন বেগম (৪২), সৈয়দ আলীর ভাই তৈয়ব আলী (৪১) ও তার ছেলে তামিম রহমান সজিব (২১)। তাদের নিকট থেকে ২২ ক্যারেটের চারটি স্বর্ণের চেইন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল বলে জানিয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, গত ১৬ মার্চ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বাজারে ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের দোকানে দুইজন নারী কিছু স্বর্ণালংকার বিক্রি করতে যান। এসময় তাদের কাছে থাকা ২ ভরি ১৫ আনা ওজনের দুইটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল, এক জোড়া কানের রিং দেখান। দোকানি স্বর্ণ যাচাই-বাছাই করে দেখেন সেগুলো আসল স্বর্ণ। তখন ওই দুই নারী জানান, তারা এর পরিবর্তে টাকা নেবেন না, নতুন স্বর্ণ নেবেন। ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকার তাতে রাজি হলে ওই দুই নারী পাশের দোকান থেকে পুরাতন সোনার বাজার মূল্য যাচাই করে আসছেন বলে জানান।

কিছুক্ষণ পর তারা দোকানে এসে পুরাতন অলঙ্কার দিয়ে দোকান থেকে নতুন অলঙ্কার নেন এবং যাওয়ার সময় বলেন- পছন্দ না হলে পরে মডেল পরিবর্তন করতে আসবেন। কিছুক্ষণ পরে ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের মনে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে তিনি পুরাতন অলঙ্কারগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পান, আগের দেখানো অলঙ্কার আর এগুলো এক নয়। পরের বার তাকে ইমিটেশন (নকল স্বর্ণ) ধরিয়ে ওই দুই নারী তার নিকট থেকে আসল স্বর্ণের অলঙ্কার নিয়ে চম্পট দিয়েছেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমদাদ জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্তকালে বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে। এরপর গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে অভিযান চালিয়ে চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা একই পরিবারের সদস্য। চক্রের মূলহোতা সৈয়ব আলী ও তার স্ত্রী নাজমিন বেগম। আর সৈয়ব আলীর ভাই তৈয়ব আলী ও তার ছেলে তামিম রহমান সজিব চক্রে জড়িত।

সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ওসি মোহাম্মদ মামুনুর রশীদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানিয়েছে, এক বছর আগে সৈয়ব আলী স্বর্ণ প্রতারণা সম্পর্কে হাতে কলমে কৌশল রপ্ত করে। আর তার স্ত্রী নাজমিন বেগম স্থানীয় পীরগঞ্জের লাকমিঠাপুরের বৃদ্ধা হাসনা বেগমের কাছ থেকে প্রতারণার কৌশল শিখেছে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে ভাই তৈয়ব আলী ও ছেলে তামিম রহমান সজিবকে প্রশিক্ষণ দেয়। প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি সৈয়ব আলী এলাকায় স্থানীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদ পান। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। সৈয়ব আলী স্থানীয় একটি হত্যা মামলায় এর আগে গ্রেফতারও হন। তারপরেও ভালোই চলছিল তাদের এই প্রতারণার ধান্দা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর