জমে উঠেছে রাঙামাটির বৈসাবি মেলা। সন্ধ্যা নামলেই মানুষের ঢল নামে মেলাতে। মানুষের পাদভারে কানায় কানায় ভরে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন ক্ষেত্র পরিণত হয়েছে মেলাস্থল। অন্যদিকে মেলা উৎসব মাতিয়ে তুলেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রাদয়ের তরুণ-তরুণীরা। তাদের পায়ের নুপুরের ছন্দ আর বাঁশির সুরে মেলা চত্বরে ছুটে এসেছে হাজারো দর্শক। তাই পুরো মেলাজুড়ে রয়েছে প্রশাসনের কড়া নজরদাড়ি।
বৃহস্পতিবার ছিল বৈসাবি মেলার চতুর্থ দিন। বিকাল ৪টায় শুরু হয় মেলা স্থলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুনীদের ঘিলে খেলা, হাড়ি ভাঙ্গা আর বাঁশের উপর হেটে চলা। খেলাতে অংশ নিতে দূর দুরান্ত থেকে ছুঠে এসেছে নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ তরুণীরা। মেলার সবগুলো স্টল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাচাঙ ঘরের আদলে তৈরি। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে। আর এসব স্টলে স্থান পেয়েছে- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, চাক, পাংখোয়া, লুসাই, খুমী ও খিয়াং নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি, সংষ্কৃতি, খাবার, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বিভিন্ন পণ্য সমগ্রী।
এ মেলার পাশপাশি চলছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দলের নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য। বসেছে পিঠা পুলির হাট। শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, চাকমা নাটক, পাচন রান্না প্রতিযোগিতাসহ পুরষ্কার বিতরন, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর জীবনধারার ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে মেলা প্রাঙ্গন। এ মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করতে যোগ দিয়েছে অপর দু’পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবানর শিল্পীরা।মেলায় আসা নিহার চাকমা জানায়, প্রতি বছল এ বৈসাবি ঘিরে আমাদের যত আনন্দ উৎসব। বছরে এ একটা সময় আমরা উচ্ছ্বসিত হয়। নতুন জামা কাপড় পরে বৈসাবি মেলায় ঘুরতে কার না ভাল লাগে।
জানা গেছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এ বৈসাবিকে ভিন্ন নামে পালন করে থাকে। চাকমা-বিজু-মারমা-সাংগ্রাইং-ত্রিপুরা- বৈসুক-তঞ্চঙ্গ্যারা-বিষু আর আহমিয়ারা-বিহু বলে পালন করে এ বৈসাবি। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে সর্বত্র এখন বৈসাবির সাজ সাজ রব।
পুরোন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে মুলত এ বৈসাবি উৎসবটিকে সামনে রেখে রাঙামাটিতে ৫ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু মেলা।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অং সুই প্রু চৌধুরী বলেন, উৎসবের আনন্দে সহিংসতা দূর হয়ে তৈরি হবে সম্প্রীতির মিলবন্ধন। পাহাড়ি-বাঙালীর ছেলে মেয়েরা এ মেলাকে প্রাণ দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে সংষ্কৃতি বিকাশ করতে প্রতি বছল উৎসবের আয়োজন করে রাঙামাটি জেলা পরিষদ। শুক্রবার বিকালে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে মেলার কর্মসূচি।
বিডি প্রতিদিন/এএম