তীব্র দাবদাহে পুড়ছে উত্তরের জেলা পাবনা। সকাল থেকেই সূর্যের প্রখর রোদ ও গরম বাতাসে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলেও জীবিকার তাগিদে কাজে বের হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শ্রমজীবী মানুষ। কাজের মাঝেই ক্লান্ত হয়ে পানিতে শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছেন কৃষিজীবীরা।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত সোমবার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ডের পর মঙ্গলবারও ছাড়িয়েছে ৪০ এর ঘর। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে দাবদাহ আরও কয়েকদিন চলমান থাকবে বলেও আশংকা আবহাওয়াবিদদের।
প্রচণ্ড দাবদাহ ও চৈত্রের খরায় প্রতিদিন গাছ থেকে ঝরে পড়ছে অপরিপক্ব লিচু ও আমের গুটি। প্রাকৃতিক কারণেই এবার লিচুর জন্য বৈরী সময়। লিচু নিয়ে রীতিমতো দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ঈশ্বরদীর লিচু চাষিরা।
কৃষকরা জানান, যখন মুকুল থেকে লিচু গুটি হয়ে উঠেছে তখন প্রচণ্ড গরমে লিচু এবং আমের গুটি ঝরে পড়তে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে পানি দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
অন্যদিকে এই তীব্র দাবদাহের মধ্যেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কোনো কোনো এলাকায় ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়েরও খবর পাওয়া গেছে। এতে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান মালিকদের। এমনকি, ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটগুলোতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
প্রচণ্ড খরায় জেলায় কৃষি সতর্কবার্তা জারি করেছে কৃষি বিভাগ। আম, লিচুর বাগান ধানের মাঠে প্রয়োজনীয় সেচ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলেও লোডশেডিং ও পানির স্তর নিচে নামায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ঝড়ে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি।
মির্জাপুর গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, দাবদাহে গাছ থেকে কাঁচা লিচু ও আমের গুটি ঝরে পড়ছে প্রতিদিন। এতে এ বছর লিচু ও আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে। ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছি। বর্তমানে সেচ দিয়েও জমিতে পানি দিতে পারছি না। জমিতে এখন সেচ দিলে একটু পরেই পানি থাকে না।
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরের লিচু চাষি হাসান বিশ্বাস বলেন, ১০ বিঘা জমিতে আমার লিচুর আবাদ রয়েছে। কিন্তু এই খরায় লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানি দিয়েও গুটি ঝরে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
রিকশাচালক মঈন উদ্দিন বলেন, পুরো জামা-কাপড় গোসল দেওয়া ভেজা কাপড়ে পরিণত হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে কখন যেন জানটাই বের হয়ে যায়। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না, তাই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। এখন কপালে যা থাকে তাই হবে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছে মানুষ। সেই সঙ্গে ডায়রিয়াও হচ্ছে। শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধরাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এ সময় সবাইকে বেশি বেশি খাবার স্যালাইন ও পানি জাতীয় জিনিস খাওয়ার কথা বলেন তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, তীব্র খরা চলছে। আর এই গরমে ঈশ্বরদীসহ পাবনার সবকটি উপজেলার লিচু ও আমের গুটি ঝড়ে যাচ্ছে। কৃষকদের সাব-মার্সিবলের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অবশ্যই সেই সেচটা রাতে দিতে হবে। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে সব সময় দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি বোরো ধানের জমিতে বিঘা প্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
এদিকে, তীব্র গরম ও দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি চেয়ে বিশেষ নামাজ ও মোনাজাত করেছেন পাবনাবাসী। যুব সমাজের আয়োজনে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড খরা থেকে রেহাই পেতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। নামাজ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জামেয়া আশরাফিয়া পাবনার শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা হারুনুর রশিদ।
নামাজ ও দোয়ায় ছাত্র, যুবকসহ কয়েক শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। রহমতের বৃষ্টি কামনা করে ২ রাকাত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়। একই নামাজ ঈশ্বরদীতেও আদায় করেন স্থানীয়রা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল