কক্সবাজারের টেকনাফে দুর্গম পাহাড় থেকে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ ছালেহ বাহিনীর ছয়জনকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারদের মধ্যে ছালেহ বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন ও তার অন্যতম সহযোগী সোহেল ডাকাতও রয়েছেন। তারা অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত। এই ছালেহ সন্ত্রাসী দলের সদস্য সংখ্যা ১৫ জন।
ছালেহর নেতৃত্বে তারা টেকনাফের শালবাগান পাহাড়, জুম্মা পাড়া ও নেচারি পার্ক এলাকা, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া পাহাড়, বড় ডেইল পাহাড়, কচ্ছপিয়া পাহাড়, জাহাজপুরা পাহাড়, হলবনিয়া পাহাড়, শিলখালী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। অটোরিকশাচালক এবং সিএনজিচালক হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন কৌশলে তারা কক্সবাজারের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শ্যামলাপুর, জাদিমোড়া ও টেকনাফ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতি করে আসছিল।
শনিবার দুপুরে কক্সবাজারস্থ র্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাহাড়ে গোলাগুলির পর ছয়জনকে গ্রেফতারের পর উদ্ধার করা হয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি, দেশীয় তৈরি তিনটি একনলা বড় বন্দুক, দুটি একনলা মাঝারি বন্দুক, ছয়টি একনলা ছোট বন্দুক, ১৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, চার রাউন্ড খালি কার্তুজ, দুটি ছুরি ও ছয়টি দেশীয় তৈরি দা।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন (৩০), তার সহযোগী নুরুল আলম নুরু (৪০), আক্তার কামাল সোহেল (৩৭), নুরুল আলম লালু (২৪), হারুনুর রশিদ (২৩) ও রিয়াজ উদ্দিন বাপ্পী (১৭)। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গা।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সালেহর নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দল অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন। ছালেহ উদ্দিন ২০১২ সালে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসে। পরে ২০১৩ সালে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যায় এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে যোগসাজশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে এবং অবৈধভাবে উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম করতে থাকে।
আক্তার কামাল সোহেল ছালেহ উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী। সে অপহরণের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছালেহর নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করতো। অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় ১০-এর অধিক মামলা রয়েছে। নুরুল আলম নুরুর বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্র, মাদকসহ ৬-এর অধিক মামলা রয়েছে। নুরুল আলম লালুসহ অন্যাদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান ছালেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণসহ ৬টির বেশি মামলা রয়েছে। র্যাব মামলা দায়ের করে থানায় সোপর্দ করার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই