গাজীপুরের কালীগঞ্জে শিশু ঐশি মন্ডল হত্যার ৬ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। সোমবার সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালীগঞ্জ সার্কেল) উখিং মে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালীগঞ্জ সার্কেল) উখিং মে জানান, চলতি বছরের ২৫ মার্চ দুপুরে অজ্ঞাত আনুমানিক ৬ বছরের এক কন্যাশিশুর অর্ধগলিত বস্তাবন্দি লাশ কালীগঞ্জের জামালপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করে। তখন পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পরদিন ক্লুলেস হিসেবে থানার এস আই ফজলুল হক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা (নং ১৬) রুজু করেন। পরে পুলিশ সেই মামলার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের প্রায় ৬ মাস পর পুলিশ সেই ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেন। পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসে ওই অজ্ঞাত কন্যাশিশুর লাশটি ঐশি মন্ডল নামে এক শিশুর। তার মায়ের ডিএনএ টেস্ট করে পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়। সে উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামের সেন্টু বিকাশের মেয়ে এবং ধনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
উখিং মে জানান, পুলিশ তদন্তকালে জানতে পারে লাশ উদ্ধারের ৩ দিন আগে ঐশি নিখোঁজ হয়। তবে পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য ঐশির মা তার সাবেক স্বামী সেন্টু মন্ডল ও তার মায়ের বিরুদ্ধে আদালতে অপহরণ মামলা করেন। যে কারণে বিষয়টি থানা পুলিশ অবগত ছিল না।তিনি আরো জানান, ঐশির বাবা সেন্টু মন্ডলের সাথে মা বিমা রাণী দাসের ৫ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ঐশির মৃত্যুর আড়াই মাস আগে বিমা রাণী দাস সন্যাসী কুমার সাহা নামের একজনকে বিয়ে করে উপজেলার জামালপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই স্থানীয় একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতো। এদিকে ঐশির মায়ের ফুফু (পিসী) অঞ্জলি রাণী বিশ^াস নিঃসন্তান হওয়ায় তার কাছেই নানা বাড়ি ধনপুরে বড় হচ্ছিল ঐশি। অঞ্জলি রাণী বিশ^াস নিজের সন্তানের মতই তাকে লালন-পালন করছিলেন। তার সম্পত্তি ঐশিকে লিখে দিতে চেয়েছিলেন। ঐশির মামা বিজয় চন্দ্র বিশ^াস সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে খালু অসিত চন্দ্র মিস্ত্রীর সহযোগীতায় তাকে গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে গলা টিপে হত্যা করে। পরে সেই লাশ একটি বস্তায় মুখবন্ধ করে খালুর সিএনজি চালিত অটোরিকসায় করে ৫ কিলোমিটার দূরে নির্জন এলাকার একটি পুকুরে ফেলে দেয়।
কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো বলেন, মামা ও খালুকে পুলিশ কালীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এছাড়া খালু (২৪ সেপ্টেম্বর) দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে বলে তিনি জানান। গ্রেফতারকৃত মামাকে সোমবার সকালে গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো: সাব্বির রহমান জানান, সোমবার ঐশির মামা বিজয় চন্দ্র বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকেও গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম