৬ অক্টোবর, ২০২৩ ২০:৫৫

বগুড়ায় টানা বর্ষণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় টানা বর্ষণে নদ-নদীর 
পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কা

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বগুড়ার সকল নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে আছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ১৭৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার প্রায় ৩২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া টানা বৃষ্টির ফলে বগুড়ার পথঘাটের পথচারিরা নানা দুর্ভোগে পড়েছে। 

জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বাঙালি নদীতে পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার বাঙালি নদীর তীরবর্তী নারচি, গোদাগাড়ি, হাটশেরপুর, বরুরবাড়ি, সারিয়াকান্দি, গোশাইবাড়ি, রামচন্দ্রপুর, ছাগলধরা, মাছিরপাড়া, কুতুবপুর, বাঁশহাটা, ভেলাবাড়ি ও জোড়গাছা এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৭৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, মাশকলাই, মরিচ এবং শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

এদিকে, গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৭ মিলিমিটার। আর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত বগুড়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার। দিনব্যাপী বৃষ্টির কারণে শহরের মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে সংকট সৃষ্টি হয়। শহরের প্রধান সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। ফলে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কোনো কোনো এলাকায় পানি জমে থাকায় চলাচল করতে পারছে না পথচারীরা। এ বৃষ্টিপাতের প্রভাবে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকার জমির ফসলের ক্ষেতে পানি জমে আছে। বৃষ্টির পানিতে সড়কের ওপর ড্রেনে ময়লা জমে আছে।

বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার নদীপাড়ের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, এখনও বন্যা দেখা দেয়নি। কিন্তু নদীর পানি বাড়ছে। এভাবে নদীর পানি বাড়তে থাকলে বন্যা দেখা দিতে পারে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা বন্যার আতঙ্কে রয়েছে। 

বগুড়া শহরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, শুক্রবারের বৃষ্টিতে শহরের জহুরুল নগর এলাকায় পানি জমে আছে। সে এলাকা দিয়ে সাধারণ পথচারীরা সহজে চলাচল করতে পারছে না। পানি জমে থাকায় বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে কোনো কোনো বাসা-বাড়ির ড্রেনের পানিও সড়কের ওপর উপচে পড়ে আছে। 

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হালিম জানান, দ্রুত পানি না কমলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। কৃষকদের সাথে ফসল রক্ষার জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এখনও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে যায়নি। পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা হলে সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকদের ক্ষতি হবে। 

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক জানান, যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বর্তমানে নদীর পানি ১৪.১৫ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। বিপদসীমার ২১০ সেন্টিমিটার  নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৩২ সে.মি.।  অতি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বেড়েছে। এখনও বন্যা দেখা দেয়নি। বাঙালি নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার নদ নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। সে কারণে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবুর রহমান জানান, যদি দ্রুত জমি থেকে বন্যার পানি নেমে যায়, তবে আমন ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। এছাড়া বৃষ্টির পানি কিছু কিছু জমিতে জমে আছে। বৃষ্টি ছেড়ে গেলে বা রোদের দেখা দিলে জমিগুলো সতেজ হয়ে উঠবে।

বগুড়া জেলা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুর রশিদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার। তবে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এই বৃষ্টির প্রভাব কমে আসতে পারে।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর