বগুড়া পৌরসভায় দেড়শো বছরেও গড়ে ওঠেনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগে শহরবাসী। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। বৃষ্টি শেষ হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা জমে থাকে পানি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসীকে।
পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না হলে মিলবে না সুফল। এ ছাড়া শহরের প্রায় সকল সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। পৌরবাসীসহ পথচারীদের চলাচলে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
জানা যায়, ১৮৭৬ সালে বগুড়া পৌরসভা স্থাপিত হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এখানে ছিল ১২টি ওয়ার্ড। ২০০৭ সালে ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ২১টি ওয়ার্ডে বর্ধিত করা হয় এই পৌরসভাকে। বগুড়া পৌরসভার প্রধান কাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়কে বাতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তবে প্রতিষ্ঠার দেড়শো বছরেও বর্জ্য সংগ্রহে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দেশের বৃহৎ এই পৌরসভা। উত্তরবঙ্গের রাজধানী খ্যাত এ শহরে এখনো যত্রতত্র দেখা মেলে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। বিপজ্জনক এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও চলছে সনাতন পদ্ধতিতে।
আয়তনে দেশের বৃহত্তম বগুড়া পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এই পরিমাণ জনবসতি থেকে প্রতিদিন গড়ে অনন্ত ৩০০ টন ময়লা-আবর্জনা জমা হয়। ফলে মানুষের ফেলে দেওয়া বর্জ্যগুলো ঘুরে ফিরে পড়ে থাকছে লোকালয়ের মাঝেই।
২০০৭ সালের আগে বগুড়া শহরের প্রতি মহল্লায় ডাস্টবিন থাকতো। বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়ির আবর্জনা সেখানে ফেলতেন। পরবর্তীতে পরিবেশ রক্ষায় ডাস্টবিন সরিয়ে ফেলা হয়। ভ্যানের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন চালু করে পৌরসভা। এই কাজের জন্য গঠন করা হয় মহল্লাভিত্তিক কমিউনিটি বেইজ অর্গানাইজেশন (সিবিও)। এ সংগঠনের মাধ্যমে ভ্যানগাড়িতে করে ময়লা নিয়ে শহরের বিভিন্ন ট্রান্সফার স্টেশনে রাখা হয়। সেখান থেকে গার্বেজ ট্রাকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা নিয়ে গিয়ে ফেলে ভাগাড়ে।
এদিকে গত বুধবার বগুড়ায় ভোর থেকে বৃষ্টি শুরু হলে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাকেন্দ্রিক সড়কগুলো। সাতমাথা থেকে কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, শেরপুর সড়ক, স্টেশন সড়ক, পার্ক রোড, শেরপুর সড়কের কলোনী বাজার এলাকায়, খান্দার সড়ক, গালাপট্রি সড়ক, টেম্পল সড়ক ছাড়াও কাঠালতলা ফতেহ আলী বাজার সড়ক, নওয়াববাড়ি সড়ক, চকযাদু ক্রস লেন-বাদুরতলা সড়ক, বড়গোলা, কাটনারপাড়া সড়কে ছিল হাঁটুপানি। এসব সড়কের দুই পাশের নালার ময়লা-আবর্জনায় ভরা নোংরা পানি উপচে পড়ে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় শহরের এমন বেহাল দশা। বৃষ্টির পানি ড্রেন দিয়ে সঠিকভাবে প্রবাহিত হয় না। তাছাড়া বৃষ্টির সময় পথচারীসহ যানবাহন চলাচলে কষ্ট হয়ে পড়ে। ভারী বর্ষণের সময় শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়তে হয় বিভিন্ন যানবাহনের চালক, শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের।
বগুড়া শহরে বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগের চিত্র দীর্ঘদিনের। বনানী থেকে মাটিডালি পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের নালা অত্যন্ত সরু। এই নালা সারা বছর ময়লা-আবর্জনায় ভরে থাকে। সামান্য বৃষ্টিতেই নালার পানি উপচে সড়কে উঠে আসে। শহরের অন্য সড়কেও পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত নালা নেই। এ ছাড়া করতোয়া নদীর দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় শহর থেকে পানি বের হতে পারছে না। বর্ষার সময় সবচেয়ে করুণ চিত্র থাকে শহরজুড়ে।
বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বগুড়া শহরে বিভিন্ন সময় ড্রেন পরিষ্কার করলেও পরবর্তীতে আবারো ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ভরে যায়। শহরের অধিকাংশ সড়কে নতুন করে ড্রেন সংস্কার করা হয়েছে। যে স্থানে সমস্যা রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে। বৃষ্টির সময় বগুড়াবাসীর যেন দুর্ভোগ না হয়, সেজন্য পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
করতোয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টি হলেই গোটা শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ভারী বর্ষণ হলে ময়লা আবর্জনায় ভরা ড্রেনের নোংরা পানি বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। পথঘাটে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        