মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও বিমান থেকে বোমা হামলা চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তের এপার থেকে গোলা ও মর্টারের বিকট শব্দ শোনা যায় এবং বোমা বিস্ফোরণে এপারের মানুষের বাড়িঘর কেঁপে উঠছে।
এসব ঘটনায় উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ, নোয়াপাড়া, সাবরাং ও পৌরসভা এলাকার মানুষ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ে রয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে এপারের ঘরবাড়ি যেভাবে কেঁপে উঠছে, এর আগে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে সরেজমিন অবস্থান করে দেখা যায়, দ্বীপের ওপারে নাফ নদের মিয়ানমার সীমান্তে হঠাৎ করে বিমান এসে বোমা ফেলছে। বোমা বিস্ফোরণের সময় এপারে মানুষের বাড়িঘর তো কাঁপছে, যে শব্দ হচ্ছে তাতে মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ২০ মিনিটের ব্যবধানে চারটি বোমা বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর শব্দ শোনা গেছে। এসময় আকাশে বিমান উড়ার শব্দও শোনা যায়। রাখাইনে রাতের ঘটনায় এপারের স্থানীয় বাসিন্দারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম বলেন, যুদ্ধ কি রাখাইনে হচ্ছে না বাংলাদেশে হচ্ছে? সন্ধ্যার পর থেকে এক মিনিট বিরতি ছাড়াই গোলাগুলি, মর্টারের বিকট শব্দ লেগে আছে। এরপরে মাঝেমধ্যে বিমান এসে যে বোমা ফেলছে, তাতে আমাদের ঘরবাড়ি ভয়ঙ্করভাবে কেঁপে উঠছে। এভাবে সীমান্তে আমাদের বসবাস অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। বোমার শব্দে বাচ্চারা আতকে উঠছে, বাবা মাকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করছে।
দ্বীপের আরেক বাসিন্দা সলিম উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারে দুই গ্রুপ যে কাণ্ড শুরু করেছে এভাবে চললে তো আমাদের বড় বিপদ হতে পারে। বান্দারবনের তুমব্রুতে মর্টারশেল পড়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আমরা এখন গ্রামে বোমা পড়ার আতঙ্কে আছি। নাফের ওপর দিয়ে যেভাবে বিমান উড়ছে এবং বোমা ফেলছে, হোক না সেটা তাদের আকাশসীমা, তাতে আমরা আতঙ্কিত না হয়ে পারছি না। যেকোনো মুহূর্তে একটু এদিক-সেদিক হলে আমাদের এলাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
টেকনাফের বাসিন্দা কাতার প্রবাসী ও ইতিহাসবিদ ডক্টর হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসে রাখাইনে গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনছি। বোমা বিস্ফোরণের সময় যেভাবে এপারের মাটি, ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে এবং স্থানীয়দের মুখে শুনলাম তাদের ছোট বাচ্চারা ভয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছে এবং ভয় পাচ্ছে। এসবের কারণে একটি শিশুর ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী রাষ্ট্র, তাদের দেশে সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই বলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীকে নিয়মিত ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা যাবে না। এ বিষয়ে সরকারের উচিত রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সমর্থিত সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলা এবং এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে, রাখাইনের চলমান পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের সীমান্তের মানুষের জানমালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় এবং কোনো বাংলাদেশিকে আতঙ্কিত হতে না হয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই