ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই কাস্তে-কোদাল নিয়ে হাজির শতাধিক শ্রমিক। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের হাঁক-ডাকে মুখরিত হয়ে উঠে শহরের প্রাণকেন্দ্র। ক্রেতারা এসে দামদর করে কিনে নিয়ে যান তাদের। ফেনীতে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা আসেন নিজেদের বিক্রির উদ্দেশ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী শহরের ট্রাংক রোডস্থ খেজুর চত্বরে নিত্যদিন বসে এই শ্রমজীবী মানুষের হাট। এখানে অন্তত ৫ শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজে গিয়ে থাকেন। জেলার সদর উপজেলার পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলাগুলো থেকে এসে কাজের প্রয়োজনে শ্রমিকদের দরদাম করে নিয়ে যাওয়া হয়।
দেশের উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, রংপুর, জামালপুর, গোপালগঞ্জসহ অন্তত ২৫টি জেলার শ্রমিকরা কাজ করছেন ফেনীতে। পাট কাটা, ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করা, মাটি কাটার কাজ করে থাকেন তারা। কাজের ধরন হিসেবে এসব শ্রমিকের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। বর্ষা মৌসুমে পাট কাটার কাজ বেশি থাকলেও মাটি কাটার কাজ কম থাকায় অনেক মাটি কাটা শ্রমিক বেকার রয়ে যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ সারি ধরে শ্রমিকরা কাজের জন্য অপেক্ষা করছেন। ডেকে ডেকে ক্রেতাদের তাদের পারিশ্রমিকের কথা বলছেন কেউ কেউ। ক্রেতারা এসে তাদের সঙ্গে দামাদামি করছেন। মূল্য নির্ধারণ শেষে অটো এবং ভ্যানযোগে গন্তব্যস্থলে রওনা করছেন। যাদের কেউ কিনছেন না তারা বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
মো: হারুন নামের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের জেলার আম বাগানে কাজ শেষ হলে ফেনী জেলায় চলে আসি। এখানে প্রচুর কৃষি কাজ আছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বিনিময়ে মানুষ আমাদের দিনজমজুর হিসেবে কিনে নিয়ে যান। নিজেদের খরচের পর বাকি যা থাকে, তা দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দেই।
ওমর ফারুক নামে আরেক শ্রমিক জানায়, আমরা বছরের ৩ মাস ফেনীতে কৃষাণের কাজ করার জন্য চলে আসি। যখন কাজের চাহিদা বেশি থাকে আমাদের চাহিদাও বেড়ে যায়। তবে কাজ কমে আসলে পারিশ্রমিক কম পাই। তবে প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন পাই বলে ভালো লাগে।
সদর উপজেলার লেমুয়া থেকে শ্রমিক কিনতে আসা আরিফুল হক নামের এক গৃহস্ত বলেন, শ্রমিকের এই হাটটি অন্তত ৩০ বছর ধরে চলমান আছে। আমার অনেক পাটের জমি আছে। এই মৌসুমে আমি পাট কাটার জন্য কৃষাণ নিতে কাজিরহাটে চলে আসি। দামদর করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে শ্রমিক পাওয়া যায়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল