বাংলাদেশের নাভিখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশের ১৫টি ইউটার্ন পয়েন্ট যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এসব ইউটার্ন পয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তার অভাবে গাড়ির চালক, যাত্রী সাধারণ, পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছে। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকা এবং সড়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশ সঠিকভাবে দেখভাল না করার কারণে মহাসড়কে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মানুষ অভিযোগ করেন।
ফেনী শহরতলীর লালপোল ইউটার্ন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। জেলার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে দুই উপজেলার চলাচলকারী পরিবহনের একমাত্র ভরসা লালপোল হওয়ায় গাড়ির অতিরিক্ত চাপের কারণে এখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি সর্বমহলের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্যস্ততম লালপোল জেলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট। লালপোল হয়ে প্রতিদিন সোনাগাজী উপজেলা ও সদর উপজেলার ধলিয়া, ফরহাদনগর, ফাজিলপুর, লেমুয়া, ছনুয়া, কালিদহ মোটবী ইউনিয়নসহ আশপাশের হাজার হাজার মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ফেনীতে আসা-যাওয়া করতে হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগামীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লালপোল পাড়ি দিতে হয়। রোগী নিয়ে স্বজনরা শহরের হাসপাতালে আসতেও লালপোলের বিকল্প নেই। শহরে প্রবেশের বিকল্প রাস্তা না থাকায় বিশাল জনগোষ্ঠীর ভরসা লালপোল।
এদিকে, মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সোনাগাজীসহ দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় মানুষের সুবিধা বিবেচনায় অস্থায়ী অনুমতি দেয়া হয়। অনুমতি মিললেও সোনাগাজীগামী ছোট গাড়ি মহাসড়ক পারাপারে সীমাহীন বিপাকে পড়ে। আতঙ্ক নিয়ে মহাসড়ক অতিক্রম করতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়কে গাড়ির বাড়তি চাপ থাকায় এবং চট্টগ্রামগামী দূরপাল্লার গাড়িগুলো মহিপাল সিক্স লেন ফ্লাইওভার অতিক্রম করার পর দ্রুত গতিতে লালপোল অতিক্রম করে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। গত কয়েক বছরে লালপোলে দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পঙ্গু হয়েছেন অনেকে।
অপরদিকে, লালপোলে মহাসড়ক পারাপারের জন্য রয়েছে দুটি ইউটার্ণ ক্রসিং। দুর্ঘটনা এড়াতে মূল ক্রসিংটি সম্প্রতি বন্ধ করে দেয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসা) শিক্ষার্থীরা । এতে অপর ক্রসিং দিয়ে দ্বিগুনভাবে প্রতিদিন অসংখ্য সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, হিউম্যান হলার, পিকআপ ও মোটরসাইকেল ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। ক্রসিংয়ে ছোট গাড়ি পারাপারের ঝুঁকি সামলাতে সিএনজি মালিক সমিতি চারজন কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ দেয়।
স্থানীয়রা জানান, ফেনী সিএনজি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গাড়ি পারাপার নিয়ন্ত্রণ করতে চারজন লোক নিয়োগ দেয়, কিন্তু গত কয়েক মাস যাবত তাদেরও দেখা মিলছে না। সোনাগাজী রোডের সিএনজি চালকরা জানায়, লালপোলের পশ্চিম পাশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন না থাকায় বাধ্য হয়ে গ্যাসের জন্য হলেও দিনে দুইবার তাদেরকে মহাসড়ক পার হতে হয়। এটি পারাপারে জীর্বন্ত অবস্থায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে হয়।
পথচারীরা জানান, আমরা নিয়মিত এ পথ দিয়েই যাতায়াত করি। এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় সড়কে গাড়ির চাপে দুর্ঘটনা ঘটে। গত ৫ বছরে লালপোলে দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০-৪০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, লালপোলে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা এখানে প্রায় সময় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। জেলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের সুবিধা বিবেচনায় এখানে একটি ওভারপাস অথবা আন্ডারপাস নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল জানান, নিরাপদ পারাপারের বিষয় বিবেচনা করে গত ২০২২ সালে আন্ডারপাস প্রকল্পটির অনুমোদন হয়েছে এবং প্রকল্পটির ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে অতি শীঘ্রই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ