ঈদ উল আযহার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে। দিনাজপুরের বৃহত্তম হাটগুলির মধ্যে কাহারোল, আমবাড়ী, রানিরবন্দর, কারেন্টের হাট, চেড়াডাঙ্গি, খোসালডাঙ্গি হাট অন্যতম। জেলার ১৩টি উপজেলায় ৬৮টি পশুর হাটে এ বছর ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৯১টি পশু বেচাকেনার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। এসব হাটে পশু ক্রয় করে বিভিন্ন পরিবহনযোগে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট।
দিনাজপুর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৫টি। বিপরীতে প্রস্তুত ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৯১টি পশু। এর মধ্যে জেলায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯টি গরু, ৫৭৭টি মহিষ, ২ লাখ ২০ হাজার ৭৮৬টি ছাগল এবং ২০ হাজার ৫৪৯টি ভেড়া রয়েছে। ৬২ হাজার ১০৮টি খামারসহ বিভিন্ন বাড়িতে এই গরুগুলো লালন-পালন করা হচ্ছে। যা চাহিদার তুলনায় এবার কোরবানির পশু ১ লাখ ৩৬ হাজার ১২৬টি বেশি। এবার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গরু বেচাকেনা হবে বলে বিক্রির প্রত্যাশা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের।
শনিবার কাহারোল হাট বসে। পশু বেচা কেনায় হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষণীয়। দুপুরে দেখা যায়, গরু-ছাগল ও মহিষ হাটিতে প্রায় ২-৩ একর জায়গার উপর অবস্থিত পশুর হাটটি। এই হাটে কোরবানির সময় ২০ হাজারেও অধিক গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া বিক্রি হয়ে থাকে। বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে এই হাটে গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। হাটে পশু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে চলে দরকষাকষি। কাহারোল হাটে ঢাকা, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালি, সিলেট, নেত্রকোণা, শেরপুর, যশোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া ক্রয় করার জন্য পরিবহন নিয়ে চলে আসেন কাহারোলের পশু হাটে।
বিক্রির জন্য নিয়ে আসা গরু বিক্রেতা মোঃ হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা চারজনে ৮টি গরু নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। গত বছরের তুলনায় এ বছর একটু পশুর দাম বেশি থাকায় হাটে ক্রেতারা দেখে শুনে কোরবানির জন্য তাদের পছন্দের পশু ক্রয় করছেন।
ডাবোর ইউপির চামদুয়ারী গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেন ৩টি গরু বিক্রয়ের জন্য নিয়ে এসেছেন এই হাটে বিক্রির জন্য। তিনি গরুগুলো বাড়িতে লালন-পালন করেছেন কিন্তু এবার গো-খাদ্যের মূল্য বেশি থাকায় গরুতে তেমন একটা লাভ হচ্ছে না।
অপরদিকে টাঙ্গাইল থেকে আসা ব্যবসায়ী মোঃ হাসান আলী বলেন, প্রতিবছর কাহারোল হাটে কোরবানির গরু ক্রয় করে নিজ জেলাসহ ঢাকায় বিক্রি করি। এ হাটে প্রচুর ছোট, বড় ও মাঝাড়ি ধরনের গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়া পাওয়া যায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর পশুসর দাম একটু বেশি।
কাহারোল হাটের ইজারাদার শ্যামল রায় জানান, গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার কাহারোল হাটের অনেক সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে গরু ব্যবসায়ীরা গরু, মহিষ, ছাগল ক্রয় করতে আসেন প্রতি শনিবারের দিন।
কাহারোল উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাক্তার মোঃ আবু সরফরাজ হোসেন জানান, শনিবার দিন উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালের স্টাফরা গরুর হাটে তারা কোরবানির জন্য গাভী গরুর প্যার্গনেন্সি ও বিভিন্ন রোগবালাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রহিম জানান, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মহাসড়কের পাশে হাট বসানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলায় ৬৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাটবাজারগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ