রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুঃখগাথা একটি নদীর নাম তিস্তা। এই নদী প্রতিবছর বর্ষায় এবং খরা মৌসুমে মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারি করছে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এনিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন করে আসছেন। বিগত শেখ হাসিনা সরকার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয়দফা দাবিতে তিস্তা পাড়ের পাঁচ জেলার ১২ উপজেলায় মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন এছাড়া একাধিকবার চীনা প্রতিনিধি দল তিস্তাপাড়ের মানুষের সাথে এবং রংপুরের বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিকদলের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রংপুরে বলেছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। তিস্তা মজাপরিকল্পনা নিয়ে চীনা প্রতিনিধিদের মতবিনিময় এবং সরকারের উপদেষ্টার আশ্বাসে তিস্তাপাড়ের মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, গত ২২ জুলাই চীন দূতাবাসের ডিরেক্টর অব দ্যা পলিটিক্যাল সেকশনের কর্মকর্তা জং জিং বিএনপির নেতাদের সাধে মত বিনিময় করে গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদী এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিএনপি নেতাদের সাথে মতবিনিময়ে চীনা কর্মকর্তা জং জিং বলেছেন, উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে গিয়ে রংপুরে একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের কথা বলেছেন। আমরা তা বাস্তবায়নে কাজ করছি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এদিকে চলতি বছরের ১০ মার্চ পাওয়ার চায়নার সিনিয়র এক্সপাট মকবুল হোসেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃরুদ্ধার প্রকল্প এর মাধ্যমে উত্তরের ৫ জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ১১০ কিলোমিটার নদীতে ১ হাজার ৩৩০ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং করা হবে। পুরো নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ, নদীর দু’ধারে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ, ৬৭টি গ্রোয়েন বা স্পার নির্মাণ ও মেরামত কাজ, নদীর দু’ধারে রোড নির্মাণ কাজ, ১৭০ দশমিক ৮৭ বর্গ কিলোমিটার ভূমি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন কাজ এবং পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষা কাজ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রোয়েন নির্মাণ ও তীর প্রতিক্ষার কারণে নদী ভাঙ্গন রোধ হবে, বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের মাধ্যমে বন্যা ঝুঁকিহ্রাস হবে, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার হবে। খননকৃত মাটি ভরাট করে নদীর তীরবর্তী ভুমি পুনরুদ্ধার করে উক্ত জমির উপর অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাওয়ার প্লান্ট, স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণ, সেচ ও কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা, শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহারের জন্যবর্ষাকালে শাখা নদীসহ ব্যারেজের উজানে তিস্তা নদীতে প্রয়োজনীয় পানিসংরক্ষণ করা এবং শুস্ক মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে প্রকল্প এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষা করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদীপাড়ের ১১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাবে। রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে তিস্তপাড়ের মানুষ, তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনকারী, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অংশীজনদের অংশগ্রহণে ‘তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃরুদ্ধার প্রকল্প’ নিয়ে মতবিনিময় সভা তিনি এসব কথা বলেছিলেন।
অপরদিকে ১৭ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদের স্মরণ সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেছেন, তিস্তা নদী নিয়ে টাকা কারা দেবে, এ নিয়ে অনেক কথা হতে পারে। তিস্তাার মতো একটা ভাঙনপ্রবণ, খরস্রোতা, ভাগ করে নেওয়া নদী, যেখানে আমরা ভাটিতে আছি, তার ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকে উৎকর্ষতার দাবি রাখে। এ জন্য চীন সরকারের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে যখন চুক্তি হয়, তাদের পরিকল্পনা সেলফে তুলে রাখা হয়। আমরা ওটা বের করলাম। ওটার ওপর কাজ করেছি। তিনি আরও বলেন, ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা প্রকল্প এই এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। এটার কাজ আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। এখানে সরকার টাকা দেবে, চীন সরকারও টাকা দেবে। এটা ১০ বছর মেয়াদের পরিকল্পনা। তার মধ্যে পাঁচ বছরে সেচ, ভাঙনরোধ ও স্থায়ী বাঁধ— এই তিন জিনিসকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হচ্ছে। বর্তমানে অতিভাঙন প্রবণ ১৯ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ