নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর শিশু পান্নাকে গণধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় দীর্ঘ নয় বছর পর রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ রায়ে তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ড, ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে একলক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন নেত্রকোনা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, ঠাকুরাকোনা গ্রামের কাজল চন্দ্র সরকারের ছেলে সাবেক জেলা ছাত্রলীগের কৃষি বিষয়ক উপ-সম্পাদক কৌশিক চন্দ্র সরকার ওরফে অপু (২৩), আব্দুল গফুরের ছেলে যুবলীগ কর্মী মামুন আকন্দ (২৬) ও একই এলাকার মিয়াচানের ছেলে ফিশারি ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া (২২)। মামলার এক নম্বর আসামি কৌশিক জামিনে বের হয়ে হাজিরা দিতে এসেছিলেন। অন্য দুজন হাজতিসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা ও দায়রা জজ ডক্টর এ কে এম এমদাদুল হক।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঠাকুরাকোনা রেলের পাশে বসবাসরত রিক্সা চালক লালচান মিয়ার ১৪ বছরের শিশু কন্যা পান্না আক্তার ঢাকা থেকে ছুটিতে এসে পাড়া বেড়াতে বের হয়। সন্ধ্যাকালে পান্নাকে একা পেয়ে কৌশিক ও মামুন তাকে টেনে হিঁচড়ে পাশের সুলতানের ফিশারি খামারের ঘরে আটকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলেও মেয়েকে না পেয়ে মা আল্পনা আক্তার চিৎকার করে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে গোঙ্গানির শব্দ শুনে অন্যরাসহ সুলতানের খামারের ঘর থেকে পান্নাকে উদ্ধার করে। ওইদিন রাতেই ধর্ষণকারীরা পরিবারটির ঘরে গিয়ে কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে আসে।
পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর সকালে নিখোঁজ হয় শিশু পান্না। পরবর্তীতে আবারও খোঁজাখুঁজির পর দুপুরে পান্নার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার পুলিশ পাশের আরেকটি পরিত্যক্ত খালি ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পান্নার মা বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করলেও আসামিরা তৎকালীন সময়ে প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। পরে পরিবারটি দাফন করতে বাধ্য হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসীসহ সামাজিক সংগঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ১০ সেপ্টেম্বর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের পর পুনরায় লাশ দাফন করা হয়।
এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামি কৌশিক ও মামুনকে ১২ সেপ্টেম্বর আটক করে আদালতে হাজির করলে তাদের দেওয়া জবানবন্দিমূলক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর আসামিকে আটক করে। এ ঘটনায় আসামিদেরকে সহযোগিতা করায় তৎকালীন সদর হাসপাতালের আরএমও ও সদর থানার ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে জেলার সবস্তরের মানুষ মানববন্ধন করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল পুলিশ চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করলে ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. নুরুল কবীর (রুবেল)সহ পান্নার মা এবং সামাজিক সংগঠন নারী নেত্রী কোহিনুর বেগম, জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসসহ সকলেই সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, চাঞ্চল্যকর মামলাটি জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রতিমাসে উত্থাপিত হতো।
বিডি প্রতিদিন/আশিক