আশঙ্কা ছিলই। তবে এ যাত্রায় বড়সড় শাস্তির মুখে পড়তে হলো না ইংল্যান্ড ওপেনার জেসন রয়কে। আইসিসি’র আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে ফাইনাল ম্যাচ থেকে নির্বাসিত হতে পারতেন জেসন রয়। ম্যাচ রেফারি সদয় হওয়ায় আপাতত জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে গেলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অখুশি প্রকাশ করে এবং অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে আইসিসি’র ক্ষোভের মুখে পড়েন জেসন। প্রবল হতাশায় মাঠেই আম্পায়ারকে গালিগালাজ করে বসেন তিনি। যদিও রয়ের ক্ষোভের কারণ ছিল সঙ্গত। সব দিক বিবেচনা করে ম্যাচ রেফারি এ যাত্রায় জরিমানা করে ছেড়ে দেন তাকে।
আইসিসি'র কোড অফ কন্ডাক্টের ২.৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হন জেসন। ফলে তার ম্যাচ ফি'র ৩০ শতাংশ জরিমানা করেন আইসিসি'র এলিট প্যানেল ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগালে। রয় দোষ স্বীকার করে শাস্তি মেনে নেওয়ায় ফরমাল হেয়ারিংয়ের প্রয়োজন হয়নি।
যেহেতু এটা জেসনের লেভেল-ওয়ান অপরাধ, তাই এবারের মতো জরিমানা দিয়েই রেহাই মেলে তার। লেভেল-ওয়ান অপরাধের জন্য নূন্যতম সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয় দোষী ক্রিকেটারকে। সব থেকে বেশি ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ জরিমানা হতে পারে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের। তবে এক থেকে দু’টি ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হতে পারে অভিযুক্ত ক্রিকেটারের ডিসিপ্লিনারি রেকর্ডে। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ ওপেনারের ডিসিপ্লিনারি রেকর্ডে যোগ হয় দুটি ডিমেরিট পয়েন্ট।
২৪ মাসের মধ্যে কোনও ক্রিকেটারের ডিসিপ্লিনারি রেকর্ডে ৪টি ডিমেরিট পয়েন্ট জমা হলে তা সাসপেনশন পয়েন্টে পরিণত হয়। দু’টি সাসপেনশন পয়েন্টের জন্য একটি টেস্ট বা দু’টি সীমিত ওভারের ম্যাচ থেকে নির্বাসিত করা হয় অভিযুক্ত ক্রিকেটারকে। ২৪ মাস অতিবাহিত হলে ডিমেরিট পয়েন্টের বৈধতা থাকে না।
এজবাস্টনে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় জেসন রয়কে। যদিও ম্যাচের ফলাফলে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। অস্ট্রেলিয়ার ২২৩ রানের জবাবে ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামলে ইনিংসের ২০তম ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন জেসন রয়। প্যাট কামিন্সের শর্ট পিচড ডেলিভারি পুল করে বাউন্ডারির বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করেন রয়। বল তার ব্যাটের কানা এড়িয়ে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির দস্তানায় গিয়ে জমা পড়ে। স্বভাবসুলভ চপলতায় অসিরা আবেদন করতে বিশেষ সময় নষ্ট করেনি। একটু ইতস্তত করে আম্পায়ার ধর্মসেনা আঙুল তুলে বসেন। অর্থাৎ জেসন রয়কে আউট ঘোষণা করেন তিনি।
টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা যায়, বল জেসন রয়ের ব্যাটে লাগেনি। আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিতেও তা প্রমাণিত হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জেসন রয়কে কার্যত ক্ষুব্ধ দেখায়। তিনি ক্রিজ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন এবং রিভিউয়ের আবেদন জানান। যদিও ইংল্যান্ড আগেই নিজেদের রিভিউ খুইয়ে বসেছিল। তাই জেসন রয়ের মাঠ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে ক্রিজ ছাড়েন বটে, তবে যাবার বেলায় আম্পায়ারের উদ্দেশ্যে কটুক্তি করে বসেন ব্রিটিশ ওপেনার যা ক্যামেরায় স্পষ্ট ধরা পড়ে। হতাশা থেকেই মাঠে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন রয়।
আউট হওয়ার আগে ৮৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে জয়ের মঞ্চে বসিয়ে দিয়ে যান জেসন রয়। জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ১২৪ রান যোগ করেন তিনি। ৬৫ বলের ইনিংসে ৯টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন রয়। বাকি কাজটা সম্পন্ন করেন জো রুট ও ইয়ন মর্গ্যান।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ৪৯ ওভারে ২২৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। পাল্টা ব্যাট করতে নেমে ৩২.১ ওভারে ২ উইকেটের বিনিময় ২২৬ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায় ইংল্যান্ড এবং ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে।
বিডি প্রতিদিন/১২ জুলাই, ২০১৯/আরাফাত