রাজা খুব সৌখিন মানুষ। বিলাসী জীবনযাপন তার। মাঝে মাঝে প্রাতঃভ্রমণে বের হন। মন্ত্রী-পেয়াদার কাছে রাজ্যের খোঁজখবর নেন। কিন্তু প্রজাদের মুখোমুখি হোন না কখনো। প্রজাদের সুখ-দুঃখের কথা শোনেন না। রাজা মনে করেন, রাজ্যের অবকাঠামোগত দিকটা আগে উন্নয়ন হওয়া দরকার। এর জন্য মসজিদ, মন্দির- উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে হবে। রাস্তাঘাট, পুকুর করতে হবে। ব্রিজ-কালভার্ট করতে হবে। সঙ্গে প্রজাদের খাজনাও বাড়াতে হবে। এসব নিয়ে ভাবেন আর রাজমন্ত্রীদের নিয়ে রাজসভা করেন রাজা।
রাজা মন্ত্রীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝিয়ে দিলেন। রাজ্যের উন্নয়ন শুরু হলো। প্রজাদের খাজনাও বেড়ে গেল। প্রজারা সময়মতো খাজনা দিতে না পারায় গোয়ালের গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হাঁস-মুরগি যা পেল সব বেঁধে নিয়ে আসল খাজনামন্ত্রীর লোকজন। রাজ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। কেউ কেউ রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গেল। পুকুরের মাছ চুরি হতে লাগল। গাছের লাউ-পাতাও চুরি হতে লাগল। বাজারে তেল, নুন, চাল, ডালের দাম বেড়ে গেল। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেল প্রজাদের। চারদিকে শুরু হলো হাহাকার। অশান্তি, বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতায় ভরে গেল রাজ্যটা। যেন রাজাহীন রাজ্যে পারিণত হলো রাজ্যটি।
প্রজারা দাবি করল, ‘আগে দ্রব্যমূল্যের দাম কমাও, কমাতে হবে। নয় তো আমরা না খেয়ে মারা যাব।’
রাজ্যের এমন দুঃখ-দুর্দশার কথা রাজার কানে কিছুই পৌঁছাল না। রাজা রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। প্রজারা রাজাকে অভিশাপ দিতে লাগল।
এক দিন রাজসভা শেষ করতে করতে রাত ৩টা বেজে গেল। রাজার ঘুম আসছে না। ভাবতে ভাবতে একসময় রাজা ঘুমিয়ে পড়লেন।
রাজা শুনতে পেলেন দূর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। কাছে গিয়ে দেখলেন ক্ষুধায় কয়েকজন শিশু ও নারী কান্নাকাটি করছে। কিছু দূর গিয়ে দেখলেন এক মধ্যবয়সি লোক কাঁদছে তার গরু-ছাগলের জন্য। এরপর রাজা দেখলেন একটি গুদামে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, চাল, ডাল, পিঁয়াজ সবকিছু মজুত করা হচ্ছে। বাজারে লোকজন অনেক, কিন্তু সাধ্যমতো কেউ কিছু কিনতে পারছে না। সবাই বলাবলি করছে, ‘এ রাজা ভালো নয়। রাজা নিপাত যাক।’
মজুতদারের কাছে মজুতের কারণ জানতে চাইলেন রাজা। মজুতদার রাজাকে দিলেন জোরে এক ধমক! রাজা বললেন, ‘খামোশ!’ রাজার ঘুম ভেঙে গেল। রাজা ঘেমে অস্থির হয়ে গেলেন। আর ভাবতে লাগলেন- দুঃস্বপ্ন! কী দেখলাম এসব!
পরদিন রাজা জরুরি রাজসভা ডাকলেন। রাজ্যের হালচাল জানতে চাইলেন।
রাজ্য বেশ ভালো চলছে। উন্নয়নের ট্রেন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আর প্রজারাও বেশ সুখে-শান্তিতে আছে বলে জানালেন সব মন্ত্রী মহোদয়।
রাজা পরদিন ছদ্মবেশে বের হলেন স্বপ্নে দেখা স্থান ও পরিস্থিতি ঘুরে দেখার জন্য। রাজা স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পেলেন। খুব অবাক হলেন! রাজা তার ভুলগুলো বুঝতে পারলেন। প্রজাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনলেন। রাজ্যের সব অনিয়ম, সিন্ডিকেট ভেঙে দিলেন। অপরাধীদের শাস্তি দিলেন। রাজ্যপরিষদ ঢেলে সাজালেন। রাজ্যে সুখ-শান্তি ফিরে এলো আবারও।