করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ঋণের টাকায় কেউ স্থায়ী আমানত বা এফডিআর করেছেন। কেউ প্রণোদনার ঋণ নিয়ে অন্য ঋণ পরিশোধ ও সমন্বয় করেছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ এ ঋণ ভিন্ন খাতে ব্যয় করেছেন। প্রণোদনার ঋণের অপব্যবহারের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে। গতকাল অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় ঋণ অপব্যবহারের চিত্র তুলে ধরে ব্যাংকের এমডিদের সতর্কও করা হয়েছে। সভায় এমডিদের বলা হয়েছে- প্রণোদনার ঋণের কেউ যাতে অপব্যবহার করতে না পারেন সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধির যে দাবি করা হয়েছে সভায় তার মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে ঋণে কিস্তি না দিলে গ্রাহকরা খেলাপি হয়ে পড়বেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিন মাস পর পর এ সভা হয়। এটি ব্যাংকার্স সভা নামে পরিচিত।
সরকার করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বড় ব্যবসায়ীদের সাড়ে ৪ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৫ শতাংশ ভর্তুকিতে ঋণ দিচ্ছে। এ পদক্ষেপের ফলে বড় ব্যবসায়ীদের সাড়ে ৪ ও ছোট উদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদ দিতে হয়। আর ব্যাংকের এফডিআর সুদের হার বেশির ভাগ ব্যাংকে ৬ শতাংশ। ফলে কেউ কেউ প্রণোদনার টাকার একটি অংশ এফডিআর করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সভায় ঋণ শ্রেণিকরণ না করার সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলেই আর খেলাপি হতে হবে না ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ জোরদার করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় গত বছর বিভিন্ন খাতে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এ প্রণোদনা প্যাকেজের বেশির ভাগ ছিল স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ। গতকালের সভায় বড় শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনা ঋণের সদ্ব্যবহার নিয়ে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের সরেজমিন পরিদর্শনের তথ্যে দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা অর্থ ব্যবহার করে একই গ্রাহক অন্যান্য ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় করেছেন। এটা প্রণোদনা ঋণের শর্তের লঙ্ঘন। প্রণোদনার শর্ত ভঙ্গ করলে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ভর্তুকি সুদ প্রদান করা হবে না। বিষয়টি ব্যাংক এমডিদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল